শিরোনাম: মানসিক স্বাস্থ্য এবং নতুন দিগন্ত: অতি সামান্য মাত্রায় মাদক সেবনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বে মনোনিবেশ করা হচ্ছে নতুন নতুন পদ্ধতির ওপর। উদ্বেগের কারণ হলো, বিভিন্ন দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা বাড়ছে, বাড়ছে এর জটিলতা। এই প্রেক্ষাপটে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিছু ক্ষেত্রে অতি সামান্য পরিমাণে মাদক সেবনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। এই পদ্ধতি ‘মাইক্রোডোজিং’ নামে পরিচিত।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে বিস্তারিত।
মাইক্রোডোজিং আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি হলো সাইকেডেলিক (মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এমন) ওষুধ, যেমন – Psilocybin (সাইলোসাইবিন) বা LSD (এলএসডি) – খুব সামান্য পরিমাণে গ্রহণ করা। এই সামান্য মাত্রা এতই কম থাকে যে, সেবনকারীর মধ্যে কোনো ‘ট্রিপ’ বা ঘোর আসার সম্ভাবনা থাকে না।
এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা কমানো। এছাড়াও কেউ কেউ মনে করেন, এর মাধ্যমে তারা আনন্দ, সৃজনশীলতা এবং অন্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কোরের প্রাক্তন সদস্য ম্যাট মেটজগার-এর ভাষ্যমতে, “আমি যখন মাইক্রোডোজিং শুরু করি, তখন কয়েক মাসের মধ্যেই আমার মধ্যে ভালো থাকার অনুভূতি আসে, যা আগে ছিল না।” তিনি ওয়াশিংটন রাজ্যের অলিম্পিয়াতে নিজের বাড়িতে মাশরুম উৎপাদন করেন, যেখানে Psilocybin-কে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, অল্প পরিমাণে সাইলোসাইবিন সেবনের মাধ্যমে তিনি PTSD (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) -এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। কলোরাডোর অউব্রি গেটস নামের আরেকজন জানান, মাইক্রোডোজিং তার সৃজনশীলতা বাড়িয়েছে এবং তাকে একজন ভালো অভিভাবক হতে সাহায্য করেছে।
কিন্তু বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের দাবির সত্যতা যাচাই করা কঠিন। কারণ, এর সঙ্গে মানুষের মানসিকতা জড়িত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাইক্রোডোজিং করেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো খালি ক্যাপসুল খেলেও একই ধরনের প্রভাব অনুভব করেছেন।
অর্থাৎ, এখানে প্লেসবো এফেক্ট-এর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী হ্যারিয়েট ডি উইট-এর মতে, “এই পদ্ধতি হয়তো কিছু মানুষের জন্য কাজ করে, আবার কারও জন্য করে না। তাই পরীক্ষাগারে এর প্রভাব মাপা কঠিন।” বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি গুরুতর বিষণ্ণতা এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য LSD-এর মাইক্রোডোজ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষণা চালাচ্ছে।
তবে, সাইলোসাইবিন-এর মাইক্রোডোজিং নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি গবেষণা হয়নি। একটি গবেষণা বলছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ সাইলোসাইবিন ব্যবহার করেছেন এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, তারা মাইক্রোডোজিং করেছেন।
সতর্কতা: মাইক্রোডোজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়নি। এছাড়া, অনুমোদনহীন উৎস থেকে সংগ্রহ করা ওষুধে ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে। অতিরিক্ত সেবন করলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোডোজিং হয়তো ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের জন্য প্লেসবো প্রভাব কাজে লাগানোর একটি উপায় হতে পারে। তবে, কোনো কিছু শুরু করার আগে, সে বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, সাইলোসাইবিন এবং এলএসডি-সহ সকল মাদকদ্রব্য সেবন ও উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো প্রকার অবৈধ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে না। আমাদের দেশেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা এবং সহায়তা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।