এরিক গিলের শিল্পকর্ম: শিল্পী নাকি অপরাধী? প্রদর্শনীতে মুখ খুলছেন নিগ্রহের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা।
যুক্তরাজ্যের একটি জাদুঘরে শিল্পী এরিক গিলের কাজের এক নতুন প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে, যেখানে শিল্পীর শিল্পকর্মের পাশাপাশি তাঁর জীবনের অন্ধকার দিকটিও তুলে ধরা হবে। এরিক গিল একাধারে ছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী, আবার তাঁর বিরুদ্ধে ছিল নিজের মেয়েদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ।
এই প্রদর্শনীটি অন্যান্য অনেক প্রদর্শনী থেকে আলাদা, কারণ এখানে গিলের শিল্পকর্মের মূল্যায়ন এবং উপস্থাপনায় সরাসরি যুক্ত থাকছেন তাঁর দ্বারা নিগৃহীত হওয়া ব্যক্তিরা।
এরিক গিলের শিল্পকর্ম নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তাঁর শিল্পকর্ম একদিকে যেমন শিল্পকলার জগতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, তেমনই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কলঙ্কজনক অধ্যায়টি এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝেই, ডিচিং মিউজিয়াম অফ আর্ট + ক্র্যাফটে (Ditchling Museum of Art + Craft) আসন্ন প্রদর্শনীটি শিল্পী ও অপরাধীর বিভাজন নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে।
প্রদর্শনীটির মূল আকর্ষণ হলো, এরিক গিলের শিল্পকর্মের সঙ্গে তাঁর কন্যাদের প্রতি তাঁর যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিবরণ দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে। “ইট টেকস আ ভিলেজ” (It Takes a Village) শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে গিলের আঁকা ছবি ‘অ্যানান্সিয়েশন’ (Annunciation) প্রদর্শিত হবে, যেখানে এক তরুণীকে এক ভীতিজনক ব্যক্তির সামনে ভীত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
নিগ্রহের শিকার হওয়া একজন নারী, যিনি এই প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত, তিনি বলেন, “এখানে কুমারী মেরী ও গ্যাব্রিয়েল দেবদূতকে নয়, বরং এক অসহায় কিশোরীকে দেখা যায়, যে তার নিজের নিরাপদ আশ্রয়েও নিরাপদ নয়। মুক্তির কোনো পথ নেই, এমনকি পেছনের জানালাটিও খুব ছোট।”
প্রদর্শনীতে গিলের আঁকা আরও কিছু চিত্রকর্ম, যেমন – তাঁর মেয়ে বেটির (Betty) ও পেট্রার (Petra) ছবিও প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে বেটির ১৬ বছর বয়সে আঁকা একটি নগ্ন ছবিও রয়েছে, যা নির্যাতনের সময়েই আঁকা হয়েছিল।
প্রদর্শনীটির অন্যতম উদ্যোক্তা, ভিভিয়ান আলমন্ড (Vivien Almond) বলেন, “আমরা এরিক গিলের কাজগুলো দেখাচ্ছি, কারণ তাঁর গল্পটা বলতে হলে তাঁর কাজগুলো দেখানো জরুরি। তাঁর কাজগুলো যেমন দেখতে হবে, তেমনই তাঁর দ্বারা মেয়েদের ওপর হওয়া নির্যাতনের ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে।”
এই প্রদর্শনীটি প্রমাণ করে, শিল্প ও অপরাধকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়। এরিক গিলের শিল্পকর্ম যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই তাঁর জীবনের এই কলঙ্কজনক অধ্যায়টিও আলোচনার দাবি রাখে। প্রদর্শনীতে আসা দর্শকদের জন্য, বিশেষভাবে যারা কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য একটি সতর্কীকরণ বার্তা প্রদর্শিত হবে।
প্রদর্শনীটির পরিচালক স্টেফ ফুলার (Steph Fuller) জানান, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁরা দর্শকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে চান এবং একইসঙ্গে নিগ্রহের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বরকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে চান। তাঁর মতে, “গোপন করে গেলে বা আলোচনা না করলে, নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো আরও বাড়তে থাকে।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান