বিখ্যাত রন্ধন বিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘টপ শেফ’-এর উপস্থাপক হিসেবে পরিচিত ক্রিস্টেন কিস এবার মুখ খুলেছেন তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে। জনপ্রিয় এই টেলিভিশন অনুষ্ঠানে শুরুতে নার্ভাস হয়ে পড়ার পর, খ্যাতিমান বিচারক টম ক skillsলিসিও তাঁকে যে অমূল্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা যেন নতুন করে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল কিসের মনে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া মিশিগানবাসী ক্রিস্টেন কিস, যিনি ‘টপ শেফ’-এর দশম সিজনের মুকুট জয় করেছিলেন, রান্নার জগতে নিজের স্থান তৈরি করেছেন কঠোর পরিশ্রমে। প্রথাগত পথে না হেঁটে, তিনি বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন।
স্থানীয় একটি দোকানে প্রিিটজেল বিক্রির মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল, এরপর তিনি পৌঁছেছেন অস্টিনের ‘আরলো গ্রে’ রেস্তোরাঁর মালিকের আসনে। বর্তমানে তিনি একইসাথে একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক এবং রন্ধন বিষয়ক লেখক।
পদ্মা লক্ষ্মীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ‘টপ শেফ’-এর উপস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণের পর, কিসের দ্বিতীয় সিজন ছিল এটি। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর নতুন স্মৃতিচারণমূলক বই ‘অ্যাক্সিডেন্টালি অন পারপাস’-এ (প্রকাশিত: ২২শে এপ্রিল, সম্ভবত ২০২৫) নিজের এই পথচলার গল্প তুলে ধরেছেন তিনি।
বইটিতে শুধু রান্নাঘরের ভেতরের ঘটনা বা প্রতিযোগিতার চাপ নয়, বরং ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিকও উন্মোচন করেছেন তিনি। নিজের ভালোবাসার কথা পরিবারকে জানানো থেকে শুরু করে মানসিক উদ্বেগের সঙ্গে কোকেন ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোও অকপটে বর্ণনা করেছেন কিস।
কিসের ভাষায়, “আমার টিভি ক্যারিয়ার গড়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এটা যেন অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ঘটেছে। আমি যে সুযোগগুলো পেয়েছি, সেগুলোতে ‘হ্যাঁ’ বলার মাধ্যমেই আমার পথ তৈরি হয়েছে।
প্রতিটি নতুন পর্দায় আসার সুযোগ আমাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমি আমার নিজের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত, এবং আমি যে সম্প্রদায়ের অংশ, তাদের হয়েও কথা বলতে পারি। এই বই লেখার মাধ্যমেও আমি সেই কাজটিই করতে চেয়েছি। আমার প্রত্যাশা, পাঠকেরা দেখুক, জীবনের পথ সবসময় সরলরৈখিক নাও হতে পারে। অপ্রত্যাশিত ঘটনাই জীবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।”
২০২৩ সালে, ‘টপ শেফ’-এর উপস্থাপক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কিস জানান, কিভাবে বিচারক টম কলিসিও তাঁকে সাহস জুগিয়েছিলেন। সেদিনের ঘটনাটি ছিল এমন – যখন তিনি মেকআপ নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন টম এগিয়ে এসে তাঁকে বলেছিলেন, “তুমি এই প্রতিযোগীদের সঙ্গে ঠিক সেভাবেই কথা বলবে, যেমনটা নিজের রেস্টুরেন্টের কর্মীদের সঙ্গে বলো।
এটা যেন প্রিশিফটের মতো। এতটুকুই।”
টমের এই পরামর্শ কিসের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। রান্নার দুনিয়ায় তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে তিনি জানতেন, মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা কতটা জরুরি।
রেস্টুরেন্টে বসে খাবারের মাধ্যমে মানুষের ভালো লাগা অনুভব করা বা তাঁর কাজ কতটা সফল হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু উপস্থাপনার কাজটি ছিল ভিন্ন। সেখানেও একই লক্ষ্য ছিল, মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা। টমের পরামর্শ কিসকে সেই কঠিন সময়ে শান্ত থাকতে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করেছিল।
কিস মনে করেন, ‘টপ শেফ’-এর মাধ্যমে তিনি অনেক সুযোগ পেয়েছেন, অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও এশীয়-আমেরিকান এবং কুইয়ার সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁকে যেভাবে সমর্থন করেছেন, তা তাঁর আত্ম-উপলব্ধিকে নতুন রূপ দিয়েছে।
এই শোয়ের মাধ্যমে তিনি গেইল সিমন্স, টম কলিসিও এবং পদ্মার মতো মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন, যা তাঁর জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ক্যামেরার সামনে আসার আগে তিনি সবসময় তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থন অনুভব করতেন।
ফাইনালের একটি বিশেষ মুহূর্তে, যখন বিজয়ীর নাম ঘোষণার দায়িত্ব তাঁর ওপর বর্তায়, কিসের মনে হয়েছিল, যেন তিনি একটি নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন। এই একটি বাক্য, বিজয়ীর জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তাঁর মনে হয়েছিল, এই অভিজ্ঞতা কোনো সমাপ্তি নয়, বরং একটি নতুন আরম্ভ।
তথ্য সূত্র: পিপল