কানাডার পার্বত্য অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য: বাংলাদেশের ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় হাইকিং ট্রেইল।
বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে। প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেকেই এখন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন।
যারা পাহাড় ভালোবাসেন, তাদের জন্য কানাডার রকি পর্বতমালা হতে পারে একটি অসাধারণ গন্তব্য। এখানকার সবুজ বনভূমি, স্বচ্ছ জলের হ্রদ, আর উঁচু পাহাড়ের চূড়া – সব মিলিয়ে এই জায়গাটি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।
আসুন, রকি পর্বতমালার কয়েকটি চমৎকার হাইকিং ট্রেইলের সাথে পরিচিত হওয়া যাক, যা একইসাথে নতুন এবং অভিজ্ঞ হাইকারদের জন্য উপযুক্ত।
শুরুর জন্য: এমেরাল্ড লেক লুপ।
যারা হাইকিং শুরু করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য ইয়োহো ন্যাশনাল পার্কের এমেরাল্ড লেক লুপ একটি আদর্শ স্থান। এই পথটি প্রায় ৩.২ মাইল লম্বা এবং খুব সহজেই হেঁটে শেষ করা যায়।
স্বচ্ছ নীল জলের এমেরাল্ড লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য মনকে শান্তি এনে দেয়। যারা ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানকার সকালের কুয়াশার দৃশ্য দারুণ আকর্ষণীয় হতে পারে।
সাধারণত, এই পথটি সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৯০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
মাঝারি পর্যায়ের জন্য: তাকাক্কা ফলস লুপ।
যারা একটু বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে চান, তাদের জন্য তাকাক্কা ফলস লুপ একটি ভালো বিকল্প। এই পথটি ইয়োহো ন্যাশনাল পার্কের ভেতরে অবস্থিত এবং প্রায় ১ মাইল লম্বা।
এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলপ্রপাত তাকাক্কা ফলস। এই জলপ্রপাতের কাছে হেঁটে যাওয়া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
পথটি কিছুটা পাথুরে, তাই ভালো গ্রিপ আছে এমন জুতো পরা জরুরি। জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে এই পথ ধরে হাঁটা সবচেয়ে উপযুক্ত।
ইতিহাস প্রেমীদের জন্য: আপার গ্রাসি লেকস লুপ ট্রেইল।
ক্যানমোরের কাছে অবস্থিত আপার গ্রাসি লেকস লুপ ট্রেইল একই সাথে ইতিহাস এবং প্রকৃতির স্বাদ দিতে পারে। এই পথটি ইতালীয় খনি শ্রমিক লরেন্স গ্রাসির জীবনকে উৎসর্গীকৃত।
পথ চলতে চলতে, লরেন্স গ্রাসির জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংবলিত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এই পথে দুটি ভাগ রয়েছে – একটি সহজ পথ, যা সারা বছর খোলা থাকে, এবং অন্যটি কিছুটা কঠিন, যেখান থেকে ক্যানমোর শহরের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।
তবে, শীতকালে এই পথটি বন্ধ থাকে।
আরও কঠিন পথের সন্ধান: সেন্টিনেল পাস।
যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন এবং কঠিন পথ পাড়ি দিতে প্রস্তুত, তাদের জন্য ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কের সেন্টিনেল পাস একটি দারুণ জায়গা। প্রায় ৭.৫ মাইল লম্বা এই পথে, পর্যটকেরা মোরাইন লেক এবং টেন পিকসের উপত্যকার মতো আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখতে পারেন।
এখানকার লার্চ ভ্যালির সোনালী ঘাস এবং বনের দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। এই পথে হাঁটার সময় হাইকিং পোল ব্যবহার করা ভালো, কারণ পথটি বেশ কঠিন।
অভিজ্ঞদের জন্য: স্কাইলাইন ট্রেইল।
যারা দুঃসাহসিক অভিযানে যেতে চান, তাদের জন্য জাস্পার ন্যাশনাল পার্কের স্কাইলাইন ট্রেইল একটি উপযুক্ত স্থান। এই পথটি প্রায় ২৭ মাইল লম্বা এবং এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়।
পথের বেশিরভাগ অংশ গাছপালাবিহীন হওয়ায়, পাহাড়ের চূড়া থেকে এখানকার বন্যপ্রাণী এবং ফুলের বাগান দেখা যায়। এখানে ভাল্লুক, এল্ক এবং ভেড়ার মতো বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যেতে পারে।
এই পথ পাড়ি দিতে ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে এবং রাতে থাকার জন্য আগে থেকে ক্যাম্পিং বুকিং করতে হয়।
চ্যালেঞ্জিং হাইকিং: কাইন্ডারসলি পাস এবং সিনক্লেয়ার ক্রিক লুপ।
কূটেনি ন্যাশনাল পার্কের এই ১১ মাইল লম্বা পথটি যারা কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে চান, তাদের জন্য। এখানকার পাহাড়, ফুলের বাগান আর বিস্তৃত উপত্যকা এই পথের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
সূর্যোদয়ের সময় যাত্রা শুরু করা ভালো, কারণ পথটি বেশ দীর্ঘ এবং এতে অনেক চড়াই-উতরাই রয়েছে। পথে ভাল্লুকের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
কাইন্ডারসলি-সিনক্লেয়ার কল-এর চূড়ায় উঠলে, চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জুড়িয়ে যায়।
কানাডার রকি পর্বতমালার এই হাইকিং ট্রেইলগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ভ্রমণের আগে, নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
এই স্থানগুলো ভ্রমণের মাধ্যমে, একদিকে যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, তেমনি অন্যদিকে নিজের শারীরিক সক্ষমতাও যাচাই করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।