ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা এখন দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল। একদিকে আছেন একজন মার্কিন বিলিওনেয়ার, অন্যদিকে ইরানের অভিজ্ঞ এক কূটনীতিক। এই আলোচনার সাফল্য-ব্যর্থতা উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্টিভ উইটকফ, যিনি একজন সফল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত উইটকফকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, তাদের আশঙ্কা, তেহরান দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
উইটকফকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়েও কাজ করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তিনি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সদস্য হিসেবে ইরাক-ইরান যুদ্ধেও তিনি লড়েছেন।
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয় কিনা, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালাবে কিনা, অথবা ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাবে কিনা।
সম্প্রতি ইতালির রোমে এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়েছে।
আব্বাস আরাকচি দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জাপানে ইরানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় মার্কিন দূতাবাস থেকেও তার কাজের প্রশংসা করা হয়েছিল।
উইকিলিকসে প্রকাশিত একটি নথিতে তাকে ‘একজন তরুণ, মার্জিত, অভিজ্ঞ কূটনীতিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্টিভ উইটকফ একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাব অনুযায়ী, তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। তিনি বিভিন্ন দেশে অ্যাপার্টমেন্ট, গলফ কোর্স এবং হোটেল তৈরি করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সঙ্গেও তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও উইটকফের পদচারণা বেড়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনার সুবিধার্থে তিনি কাজ করেছেন। যদিও পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।
ইরানের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে উইটকফ কতটা সফল হবেন, তা এখন দেখার বিষয়। কারণ, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে সরিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
উইটকফ সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইরান চাইলে ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের অধিকার বজায় রাখতে চায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, দুই পক্ষের আলোচনা এখনো চলছে এবং এর ফলাফল উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস