হ্যারি পটার সিরিজের লেখিকা জে কে রাওলিং-এর বিতর্কিত জীবন: রূপকথার জগত থেকে লিঙ্গ পরিচয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের স্রষ্টা জে কে রাওলিং-এর খ্যাতি কারও অজানা নয়। শিশুদের জন্য লেখা তাঁর এই কল্পনাবাদী সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
কিন্তু সম্প্রতি লেখক তাঁর ব্যক্তিগত মতামতের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। একদিকে যখন তাঁর সৃষ্টি ‘হ্যারি পটার’ নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে, তখন তাঁর লিঙ্গ পরিচয় সংক্রান্ত মতামত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায়ের পর, যেখানে নারীর সংজ্ঞা নির্ধারণে জৈবিক লিঙ্গকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, রাওলিং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি এই রায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং নিজের পুরোনো অবস্থানে অবিচল রয়েছেন।
রাওলিন সাধারণত তাঁর সামাজিক মাধ্যমে নারীদের অধিকার এবং স্থান নিয়ে কথা বলেন। তিনি ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’ নামক একটি সংগঠনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং তাদের আইনি লড়াইয়ের জন্য অর্থ সাহায্যও করেছেন। এই সংগঠনটি নারীদের জন্য আলাদা স্থান এবং অধিকারের পক্ষে কথা বলে।
তবে রাওলিং-এর এই অবস্থান অনেকের কাছে বিতর্কিত। তাঁকে প্রায়ই ‘ট্রান্সফোবিক’ বা ‘রূপান্তরকামী-ভীতি’র সমর্থক হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
তাঁর সমালোচকেরা মনে করেন, তিনি রূপান্তরকামীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেন। যদিও রাওলিং বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রত্যেক রূপান্তরকামীর নিজস্ব জীবন ধারণের অধিকার রয়েছে এবং তিনি তাদের সম্মান করেন।
২০১৯ সাল থেকে রাওলিং এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু করেন। তিনি একজন কর বিশেষজ্ঞের সমর্থনে টুইট করেছিলেন, যিনি রূপান্তর নারী ও পুরুষের জৈবিক লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন।
এরপর ২০২০ সালে তিনি ঋতুস্রাব নিয়ে লেখা একটি নিবন্ধের প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, তিনি তাঁর ওয়েবসাইটে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি ‘নতুন ট্রান্স অ্যাক্টিভিজম’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তাঁর এই মন্তব্যের জেরে ‘হ্যারি পটার’ ছবিতে অভিনয় করা ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ, এমা ওয়াটসন এবং রুপার্ট গ্রিন্ট সহ অনেকে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানান।
এমনকি, হ্যারি পটার সিরিজের সঙ্গে যুক্ত ‘কুইডিচ’ খেলার নাম পরিবর্তন করে ‘কোয়াডবল’ রাখা হয়, যার অন্যতম কারণ ছিল রাওলিংয়ের বিতর্কিত মন্তব্য।
আলোচনা-সমালোচনার মাঝেও রাওলিং একজন সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত। তিনি ভলান্ট নামক একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে নারী ও শিশুদের কল্যাণে কাজ করেন।
তাঁর মা’য়ের নামে স্কটল্যান্ডে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগের গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।
জে কে রাওলিং একাধারে একজন সফল লেখিকা এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। একদিকে তাঁর সাহিত্যকর্মের জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে লিঙ্গ পরিচয় সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর মতামত—এই দুইয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি।
তাঁর এই অবস্থান ভবিষ্যতে আরও কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান