নিউ ইয়র্ক সিটির বাসিন্দা, আলিসা মোসলে, লটারিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ জিতেছেন। আর এই অপ্রত্যাশিত জয়ের পরেই তার জীবনে আসে বড় পরিবর্তন।
আর্থিক নিরাপত্তা আসার ফলে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের স্বপ্নগুলো অনুসরণ করতে শুরু করেছেন এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন করে ভাবনাচিন্তা করেছেন।
সাধারণত, বিশের কোঠায় নিউ ইয়র্ক শহরে থাকা বেশ ব্যয়বহুল। সেখানে বাসা ভাড়া, খাবার এবং যাতায়াতের খরচ তো আছেই, সেই সাথে নতুন কিছু করার বা কেনারও একটা আকর্ষণ থাকে।
কিন্তু লটারি জেতার পর, আলিসার কাছে দামি পোশাক, ব্যাগ বা জুতো—এগুলোর থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জীবনের নিরাপত্তা এবং আত্মবিশ্বাস।
এই জয়ের পরেই তিনি তার বাগদান ভেঙে দেন।
মানুষের জীবনে অর্থের গুরুত্ব আছে, কিন্তু এটি জীবনের সব সমস্যার সমাধান নয়—এমনটাই মনে করেন আলিসা। তার মতে, জীবনের প্রতিটি দিনকে দারুণ করে তোলার ক্ষমতা টাকার নেই।
লটারি জেতার আগে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং অর্থের মূল্য ভালো করেই জানেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে জীবনের ভিত্তি সম্পর্কে আরও বেশি ধারণা দিয়েছে।
যদিও আলিসা ঠিক কত টাকা জিতেছেন, তা প্রকাশ করেননি, তবে তিনি জানিয়েছেন যে লটারির টিকিটটি তিনি বেনামীভাবে কিনেছিলেন।
প্রথমে তিনি বিষয়টি সবার সাথে ভাগ করে নিতে দ্বিধা বোধ করেছিলেন, কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে তিনি তার এই গল্পটি সবার সাথে শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে টিকটকে তার ৩১ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
সেখানে তিনি “দিনের শুরু থেকে শেষ” (Day In My Life) ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে লটারি জেতার পর তার জীবনযাত্রা তুলে ধরেন।
আলিসা বলেন, “আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি উপলব্ধি করি, জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে নতুন কিছু পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, তা কমে যায়।
তাই, যখন আমি কিছু খরচ করি, তখন শখের পেছনে বা অভিজ্ঞতার জন্য করি, বস্তুগত জিনিসের পরিবর্তে।”
ফ্যাশন ভালোবাসেন আলিসা। এখন তিনি তার পছন্দের কাজগুলো করার স্বাধীনতা পেয়েছেন।
আগে তিনি কর্পোরেট ফ্যাশন জগতে কাজ করতেন, কিন্তু এখন নিজের সৃজনশীলতাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি জানান, ছোটবেলায় সেলাই করতেন, এখন আবার সেই সুযোগ পেয়ে খুব খুশি।
এছাড়াও, তিনি জলরং এবং ছবি আঁকার মতো কাজগুলো করতে ভালোবাসেন, যেগুলো আগে সময়ের অভাবে করা হতো না।
সময় পাওয়ার পরে আলিসা খেলাধুলার দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন।
আগে তিনি চিয়ারলিডিং করতেন, কিন্তু কাজের চাপে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন তিনি নিয়মিত দৌড়ান এবং সম্প্রতি ৫ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করেছেন।
এমনকি একটি হাফ ম্যারাথন এবং পরবর্তীতে ফুল ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আলিসা আরও যোগ করেন, “নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে পারাটা আমার জন্য খুবই সৌভাগ্যের।”
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আলিসা তার মানসিক শান্তির উপর প্রভাব ফেলে এমন বিষয়গুলোর দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন।
বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
তিনি মনে করেন, লটারি জেতার আগে যারা তার জীবন থেকে দূরে চলে গিয়েছিল, সেটা ভালোই হয়েছে।
সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আলিসা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি তার প্রাক্তন বাগদত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তবে তিনি মনে করেন, এখনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত নন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, একজন নারী হিসেবে যখন আর্থিক স্বাধীনতা আসে, তখন বিয়ের ধারণাটা বদলে যায়।
কারণ, অনেক সময় আমরা স্থিতিশীলতার জন্য বিয়ে করি।
তবে আমি মনে করি, আমার এখন পরিবার শুরু করার বা থিতু হওয়ার মতো মানসিকতা নেই।”
টিকটকে তিনি তার বাগদান ভেঙে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেছিলেন, “বিয়ে অনেক সময় মানুষকে অসুখী করে তোলার ফাঁদ।” তিনি এখনো তারুণ্যে বিশ্বাসী এবং এমন একটি জীবনে আবদ্ধ হতে চান না, যা তার জন্য সঠিক নয়।
আলিসা একটি বই পড়ছেন, যার নাম “উইমেন হু রান উইথ দ্য ওল্ভস”।
এই বইটিতে বিয়ের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং সেখানে ভালোবাসার পরিবর্তে কীভাবে সম্পদ রক্ষার জন্য বিয়ে করা হতো, সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন এই আর্থিক স্বাধীনতা আসার পর, আলিসা বিয়ের আইনি এবং আর্থিক দিকগুলো নিয়ে সচেতন।
তিনি মনে করেন, “সম্পর্কে থাকা ভালো, ভালোবাসা ভালো, তবে যখন এতে আইনি বিষয়গুলো যুক্ত হয়, তখন আমার মনে হয় আমি এখনো সেটার জন্য প্রস্তুত নই।”
ভবিষ্যতে আলিসা তার জীবনের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে, ভালো বন্ধু নির্বাচন করতে এবং অতিরিক্ত খরচ না করে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে চান।
তিনি বলেন, “আমার চারপাশে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা আমার কাছ থেকে কিছু আশা করে না। তারা আমাকে সমর্থন করে এবং আমার সাফল্য দেখে খুশি হয়।”
তথ্য সূত্র: পিপল