যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলকরণ: বাড়ছে উদ্বেগ, শঙ্কায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা
উচ্চ শিক্ষার জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে চাওয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা যেন সোনার হরিণ। কিন্তু সম্প্রতি ভিসা বাতিল করার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক নীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এই ভিসা বাতিলের প্রবণতা বেড়েছে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সাধারণত, ট্যুরিস্ট ভিসা সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা দেওয়া হলেও, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানত তিনটি ধরণের ভিসা প্রচলিত আছে।
এর মধ্যে ‘এফ-১’ ভিসা হলো সবচেয়ে পরিচিত, যা হাই স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও, ভোকেশনাল প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘এম-১’ এবং ‘জে-১’ ভিসা রয়েছে, যা বিশেষত এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদান এবং বাতিলের ক্ষেত্রে দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ভিসা বাতিল হতে পারে, যেমন ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করা অথবা আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়া।
এমনকি, কোনো অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও ভিসা বাতিল করার নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে, পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক গুরুতর কোনো উদ্বেগের কারণ হলে, ভিসা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ভিসা বাতিলের এই প্রক্রিয়া আরও কঠোর হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, সামান্য ভুলের কারণেও শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এমনকি, কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই, কেবল রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেও ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানোয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের দ্রুত দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে, তাদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, যেসব শিক্ষার্থী ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন, তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতি পরিবর্তনের ফলে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি বাড়ছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি, কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তির সংখ্যাও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ভিসা প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তাই, ভিসা সংক্রান্ত সব নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, সচেতন থেকে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন