গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় গত দুই দিনে ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২১৯ জন, জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শনিবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিলের মধ্যে চালানো হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে অথবা উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছানো সম্ভব হয়নি এমন স্থানে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন। খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে রাতের বেলা চালানো বিমান হামলায় অন্তত ১৫ জন শিশু নিহত হয়েছে।
রাফায় চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন এক মা ও তাঁর মেয়ে। তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন নিহত হয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম গাজা থেকে জানিয়েছেন, “অধিকাংশ সাধারণ মানুষের জন্য রাতের বেলাটা এক বিভীষিকা এবং সীমাহীন কষ্টের সময়।
উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে, অস্থায়ী তাঁবুতে—কারও নিরাপত্তা নেই।”
সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির পর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান জোরদার করেছে এবং গাজার ভেতরে বিশাল ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ তৈরি করতে চাইছে।
২ মার্চ থেকে তারা এই অঞ্চলে খাদ্য, জ্বালানি ও ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মানবিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ইসরায়েল তা মানছে না।
ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। ‘অক্সফ্যাম’-এর নীতি বিষয়ক প্রধান বুশরা খালিদি বলেন, “শিশুরা দিনে একবেলাও খাবার পাচ্ছে না এবং তাদের পরের বেলার খাবার খুঁজে বের করতে কষ্ট হচ্ছে।
গাজায় অপুষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
এদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল চেয়েছিল, হামাস যেন তাদের হাতে বন্দী ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং অস্ত্র ত্যাগ করে।
বিনিময়ে তারা ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি ছিল।
হামাসের অস্ত্র ত্যাগ করার কোনো প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের জন্য লাল রেখা, এক কোটি লাল রেখা।”
হামাস জানিয়েছে, তারা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যাদের সংখ্যা ৫৮ জনের মতো হতে পারে। তবে এর বিনিময়ে তারা চায় যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৬৪ জন।
আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আবু আজ্জুম আরও বলেন, “আমরা এখানকার সবার মুখেই গভীর মানসিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি।
সবাই খুব ক্লান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে হাঁটছেন। তাঁদের মনে একটাই প্রশ্ন— ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা