ওয়াকো অবরোধ: আমেরিকার এক রক্তাক্ত অধ্যায়
১৯৯৩ সালের কথা। আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ওয়াকোর কাছে একটি স্থানে, এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের ৫ দিন ব্যাপী এক ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার পরিণতিতে প্রায় ৮০ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যা আজও বিতর্কিত একটি বিষয়।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ‘ব্রাঞ্চ ডেভিডিয়ানস’ নামক একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র মজুত করার অভিযোগ ওঠে। ডেভিড কোরেস নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদেরকে যিশুর দ্বিতীয় আগমনের জন্য প্রস্তুত করছিলেন বলে জানা যায়।
১৯৯৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যুরো অফ অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস’ (এ টি এফ) এর এজেন্টরা ডেভিডিয়ানদের কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়। কিন্তু তাদের এই অভিযান প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, এবং উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে কয়েকজন এ টি এফ এজেন্ট ও ডেভিডিয়ান সদস্য নিহত হন। এরপরে শুরু হয় দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা।
এই অচলাবস্থার মধ্যেই, ফেডারেল এজেন্টরা ডেভিডিয়ানদের কমপ্লেক্স থেকে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হলেও, তা সফল হয়নি।
অবশেষে, ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৩ তারিখে, এ টি এফ এজেন্টরা টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে আগুন ধরে যায়। আগুনে পুড়ে ডেভিড কোরেস সহ প্রায় ৮০ জন ডেভিডিয়ান সদস্যের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে অনেক শিশুও ছিল।
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ আজও বিতর্কিত। কর্তৃপক্ষের দাবি, ডেভিডিয়ানরাই ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ধরিয়েছিল। অন্যদিকে, ডেভিডিয়ানদের কিছু উত্তরসূরিদের অভিযোগ, ফেডারেল এজেন্টদের দ্বারাই আগুন লেগেছিল।
এই ঘটনার পর, কিছু ডেভিডিয়ান সদস্যকে সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার মূল কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ওয়াকো অবরোধের ঘটনাটি আমেরিকার ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, যা ধর্মীয় গোঁড়ামি, সরকারি হস্তক্ষেপ এবং মানুষের জীবনহানির এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।
তথ্যসূত্র: পিপল