সারা সপ্তাহ অফিসের একঘেয়েমি আর ছুটির দিনের অপেক্ষায় দিন কাটানো—এই ধরনের জীবনযাত্রা কি আমাদের জন্য উপযুক্ত? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে জীবন কাটানো খুব একটা ফলপ্রসূ নয়।
তারা মনে করেন, জীবনের প্রতিটি দিন উপভোগ করা উচিত, শুধু সপ্তাহান্তে নয়। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
কর্মক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত জীবনে—সবারই একটি সুন্দর ভারসাম্য (কর্ম-জীবন ভারসাম্য) বজায় রাখা প্রয়োজন। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ সাইকোলজি সেন্টারের অধ্যাপক ড. জেমস পাওয়েলস্কি বলেন, “সপ্তাহে যদি পাঁচ দিন অফিসের চিন্তা করতে হয়, আর ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তবে জীবনের অনেক সুন্দর মুহূর্তই আমরা মিস করি।
তাহলে, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমত, সপ্তাহের দিনগুলোতে আনন্দ যোগ করা। ছুটির দিনের মতো, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতেও কিছু উপভোগ করার মতো কাজ যোগ করা যেতে পারে।
যেমন, বন্ধুদের সাথে কফি খেতে যাওয়া, খেলাধুলা করা অথবা পছন্দের কোনো শখের প্রতি সময় দেওয়া। ড. পাওয়েলস্কি এবং তাঁর স্ত্রী সুজান মিলে একটি ইম্প্রোভাইজেশন ক্লাসে (improv class) যান।
যদিও অনেক সময় ক্লান্ত থাকেন, তবুও তাঁরা নিয়মিত সেখানে যান। কারণ, আগে থেকেই পরিকল্পনা করা থাকলে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে, তা আরও বেশি আনন্দ দেয়।
দ্বিতীয়ত, সম্পর্ক তৈরি করা। মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা যেতে পারে।
প্রতিদিন চেষ্টা করুন, সহকর্মীদের সম্পর্কে নতুন কিছু জানার এবং তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করার। এতে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে, যা আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করে।
তৃতীয়ত, কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব আনা। যদি আপনি এমন কোনো কাজ করেন যা আপনার ভালো লাগে না, তবে সেই কাজটি করার অন্য কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-র গ্রেটার গুড সায়েন্স সেন্টারের পরিচালক ড. এমিলিয়ানা সাইমন-থমাস বলেন, “ছোট ছোট কাজগুলোও আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করতে পারে।” উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো প্রজেক্টের ইমেইলগুলোর উত্তর দেন, তবে নিজেকে বলতে পারেন, “আমি এই ইমেইলগুলোর উত্তর দিচ্ছি, যাতে আমরা কাজটি শুরু করতে পারি এবং এটি আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক আবেগ তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। কাজের ফাঁকে বন্ধুদের সাথে কথা বলা, অথবা নিজের জন্য পছন্দের কোনো খাবার খাওয়া—এগুলো আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সোনজা লিয়ুবোমিরস্কি বলেন, “আনন্দ হলো—প্রায়ই ইতিবাচক আবেগ অনুভব করার ক্ষমতা। এই আবেগগুলো হতে পারে—আনন্দ, কৌতূহল, গর্ব অথবা স্নেহ।
সুতরাং, শুধুমাত্র ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষা না করে, প্রতিদিনের জীবনে আনন্দ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। একটি সুন্দর জীবন ধারণের জন্য কর্ম-জীবন-এর ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: CNN