বহু বছর ধরে কারাবন্দী থাকা মেনেনদেজ ভাইদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ১৯৮৯ সালে মা-বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এরিক ও লাইল মেনেনদেজ মুক্তি চেয়ে দিনের পর দিন আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
সম্প্রতি তাদের আপিলের শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ আবারও পিছিয়ে যাওয়ায় তাদের মুক্তি প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হলো।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি আদালতের বিচারক মাইকেল জেসিকের কাছে তাদের আইনজীবীরা এই আবেদন করেন, যাতে তাদের বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগকে হ্রাস করে ‘অনিচ্ছাকৃত নরহত্যা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি তা করা হতো, তবে তাদের অবিলম্বে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো।
এই মামলার শুনানিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় বিচারক শুনানি আগামী মাসের জন্য স্থগিত করেন। মেনেনদেজ ভাইদের পরিবারের সদস্য আনা মারিয়া বারাল্ট আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, “পরিবার হিসেবে আমরা হতাশ হয়েছি।
কিছু অপ্রত্যাশিত কারণে, যেমন দাবানলের কারণে, এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়েছে। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। তবে এই বিলম্ব আমাদের জন্য খুব একটা উদ্বেগের নয়। আমরা পরিবার হিসেবে সবসময় তাদের পাশে আছি।”
এর আগে, গত এক বছরে জনসাধারণের সমর্থন এবং প্রাক্তন লস অ্যাঞ্জেলেস জেলার অ্যাটর্নির সুপারিশের কারণে ভাইদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়া, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরও প্যারোল বোর্ডকে তাদের মুক্তি দেওয়া হলে জনসাধারণের জন্য কোনো ঝুঁকি আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।
১৯৯৬ সালে, ৫৪ বছর বয়সী এরিক এবং ৫৭ বছর বয়সী লাইলকে তাদের বাবা-মা, একজন বিনোদন নির্বাহী জোসে মেনেনদেজ এবং কিটি মেনেনদেজকে গুলি করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন এবং প্যারোলের কোনো সুযোগ রাখেননি।
ভাইদের দাবি ছিল, তাদের বাবা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন, এবং তারা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে, সরকারি কৌঁসুলিরা তাদের অভিযুক্ত করে বলেন যে, তারা তাদের বাবার বিশাল সম্পত্তির লোভে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
বর্তমানে তারা বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তির চেষ্টা করছেন, যার মধ্যে রয়েছে নতুন প্রমাণের ভিত্তিতে নতুন বিচার চাওয়া, গভর্নরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাদের সাজা কমানোর আবেদন। তাদের গল্প নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র এবং একটি জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ তাদের নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেছিল, যা জনসাধারণের মধ্যে তাদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করে।
এমনকি কিম কার্দাশিয়ানের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও তাদের মুক্তির পক্ষে সমর্থন জানান।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির প্রাক্তন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জর্জ গ্যাসকন, যিনি উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত, ভাইদের ৫০ বছর কারাদণ্ডের সুপারিশ করেছিলেন, যা ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী তাদের মুক্তির পথ খুলে দিত। তিনি বলেছিলেন, ভাইদের ওপর “অত্যধিক নির্যাতন” চালানো হয়েছে এবং তারা সমাজের কাছে তাদের দেনা পরিশোধ করেছেন।
তিনি কারাগারে তাদের ভালো আচরণের কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে তারা কলেজ ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং অন্যদের সাহায্য করেছেন।
তবে, গত নভেম্বরে গ্যাসকন তার পদ হারান এবং নতুন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি নাথান হকম্যান জানান, তিনি সাজা কমানোর প্রস্তাবে সমর্থন করবেন না। তিনি যুক্তি দেন যে, ভাইরা তাদের অপরাধের জন্য সম্পূর্ণ দায় স্বীকার করেননি।
ভাইদের পরিবারের সদস্যরা, যারা অধিকাংশই তাদের মুক্তির পক্ষে, নতুন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং তাকে এই মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মতে, তিনি “আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় নিরপেক্ষতা, যত্ন বা মনোযোগের সঙ্গে এই মামলার পরিচালনা করতে অক্ষম”।
গত সপ্তাহে শুনানির সময়, সরকারি কৌঁসুলিরা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জোসে মেনেনদেজের একটি রক্তাক্ত ছবি প্রদর্শন করেন, যা পরিবারের সদস্যদের মনে গভীর আঘাত দেয়।
পরিবারের সদস্যরা একে “অমানবিক” এবং “অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জোসের বোন, ৮৫ বছর বয়সী ক্যানসার আক্রান্ত টেরি বারাল্ট এই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
আগামী ৯ই মে এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian