সোনার শহর জোহানেসবার্গ: শিল্পী ও কর্মীদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর জোহানেসবার্গ, একসময় যা ‘সোনার শহর’ নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে নানা সমস্যা জর্জরিত।
দারিদ্র্য, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, এবং অপরাধের বিস্তার—শহরটির কেন্দ্রকে গ্রাস করেছে। তবে এই সংকটকালে, স্থানীয় শিল্পী, সমাজকর্মী এবং উদ্যোক্তারা শহরটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একজোট হয়েছেন।
তাদের লক্ষ্য, শহরটিকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য একটি বাসযোগ্য স্থান তৈরি করা।
জোহানেসবার্গের কেন্দ্রে, পুরনো বাড়িগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়।
এক সময়ের ধনী বাসিন্দারা শহর ছেড়ে যাওয়ায়, পরিত্যক্ত বাড়িগুলো এখন আশ্রয়হীন মানুষের ঠিকানা।
এখানকার বাসিন্দারা মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, যেমন—সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলের অভাব এবং ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট।
শহরের এই বেহাল দশার জন্য অনেকে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন।
তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে কিছু উদ্যোগে।
‘জোজি মাই জোজি’ নামক একটি সংগঠন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শহরের সৌন্দর্য ফেরানোর চেষ্টা করছে।
এরই মধ্যে তারা ৬০০টির বেশি সৌরবিদ্যুৎ চালিত রাস্তার বাতি লাগিয়েছে।
তাদের কার্যক্রম শুধু শহরের কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং সোয়েতোর মতো পুরনো কালো অধ্যুষিত এলাকাতেও তারা কাজ শুরু করেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও জোহানেসবার্গের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
একসময় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন ছিল, যা শহরটিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে দেয়।
বর্ণবাদের কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য তৈরি হওয়া শহরতলির (টাউনশিপ) অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়।
এই বৈষম্যপূর্ণ ইতিহাস শহরের বর্তমান সমস্যাগুলোর একটি প্রধান কারণ।
শহরের মেয়র কার্যালয় পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছে।
এছাড়া, বাসিন্দাদের জন্য জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।
ম্যানহাটন কোর্টের মতো কিছু আবাসনে, বাসিন্দারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য চেষ্টা করছেন।
তারা তাদের আবাসনের মালিকানা পেতে চান এবং শহরের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে চান।
এই কঠিন পরিস্থিতিতেও, শিল্পীরা শহরের প্রাণবন্ততা টিকিয়ে রেখেছেন।
‘দ্য ব্যাগ ফ্যাক্টরি’র মতো শিল্পী স্টুডিওগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শিল্পীদের আশ্রয়স্থল।
এখানকার শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে শহরের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছেন।
জোহানেসবার্গের এই সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা, বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্যও শিক্ষণীয়।
আমাদের দেশের শহরগুলোতেও দ্রুত নগরায়নের ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেমন— বস্তিবাসীর দুরবস্থা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অভাব।
জোহানেসবার্গের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়, স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি শহরের পুনরুজ্জীবন সম্ভব।
তথ্য সূত্র: The Guardian