সুমিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: শোক আর ধ্বংসস্তূপের মাঝে ইউক্রেনীয়দের আর্তনাদ।
ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন বহু মানুষ, যার মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। গত পাম সানডে’তে চালানো এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
ধ্বংসস্তূপের মাঝে স্বজন হারানোর বেদনা আর যুদ্ধ বন্ধের আকুতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে এসেছে সেই বিভীষিকাময় দিনের চিত্র। ঘটনার দিন, আল্লা শিরশোনকোভা নামে এক নারী তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে ৬২ নম্বর বাসে উঠেন।
সুন্দর আবহাওয়ার দিনে অনেকের মত তিনিও ভেবেছিলেন, বন্ধুদের সাথে বসে চা খাবেন, পাখির গান শুনবেন। কিন্তু শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছানোর পরেই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সবকিছু।
মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে ধ্বংসযজ্ঞ, গাড়িতে আগুন, আর আহত মানুষের আর্তনাদ।
শিরশোনকোভা জানান, “আমি যখন বাস থেকে বের হলাম, দেখি চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ। মানুষজন মাটিতে পড়ে আছে।
আমি তাদের উঠার জন্য বলছিলাম, কিন্তু তারা নীরব ছিল।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, ৭২ বছর বয়সী হেনাদি স্মোলিয়ারভ জানান, তিনি চোখের ড্রপ কিনতে শহরে গিয়েছিলেন।
তিনিও সেই বাসের যাত্রী ছিলেন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তার ফুসফুস ও মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে।
তিনি বলেন, “তারা (রাশিয়া) ইউক্রেনীয়দের ধ্বংস করতে চাইছে। পুতিন বলেন, আমরা নাকি কোনো জাতিই নই।”
আহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশুও রয়েছে। সুমির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নার্স জানান, আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর, তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
এই হামলার পর ইউক্রেন জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা নিহত শিশুদের খেলনা নিয়ে এসে সমাধিস্থলে রাখছেন।
এদিকে, এই হামলার জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন অনেকে। আহত শিরশোনকোভা বলেন, “ট্রাম্প এখন রাশিয়াকে সমর্থন করছেন।
আমি চাই তিনি ইউক্রেনে আসুক এবং দেখুক পুতিন কী করছেন। আমি চাই বাইডেনের মতোই ট্রাম্প আমাদের সাহায্য করুক।”
যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং, রাশিয়া বেসামরিক ও অবকাঠামোতে হামলা আরও বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের আলোচনার কৌশল সম্ভবত রাশিয়ার পক্ষেই ঝুঁকছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুমিতে এখনো উড়ছে ধ্বংসের চিহ্ন, আর স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান