গাজা সেবনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ (dementia) রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। কানাডার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গাজা সেবনের কারণে হাসপাতালে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি।
কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পারিবারিক medicine বিভাগের অধ্যাপক ড. ড্যানিয়েল মায়রান এবং তার সহকর্মীরা এই গবেষণাটি করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, জরুরি বিভাগে গাজার কারণে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ঝুঁকি, অন্য কোনো কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। এমনকি সাধারণ মানুষের তুলনায় এই ঝুঁকি ৭২ শতাংশ বেশি।
এই গবেষণাটি ‘JAMA Neurology’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে, অন্টারিও প্রদেশের ৪৫ থেকে ১০৫ বছর বয়সী ৬০ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এদের মধ্যে ১৬,০০০ এর বেশি মানুষ গাজার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। গবেষণায় দেখা গেছে, গাজার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৫ শতাংশ পাঁচ বছরের মধ্যে এবং ১৯ শতাংশ ১০ বছরের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, এই গবেষণায় স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার কারণ হিসেবে বয়স, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য অথবা অন্য কোনো মাদক সেবনের মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাই গাজা সেবনের সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণা বলছে, শুধু কানাডাই নয়, এই তথ্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। কারণ, সেখানেও ইদানীংকালে গাঁজা সেবনের প্রবণতা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণাটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তাদের গাঁজা সেবনের সমস্যা আছে কিনা, সে বিষয়ে রোগীদের নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা উচিত। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ও ঔষধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রবার্ট পেইজ দ্বিতীয়ের মতে, “যারা গাঁজা সেবনে আসক্ত, তারা স্বাস্থ্যগত বা সামাজিক সমস্যা হলেও এটি ছাড়তে পারেন না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গাঁজা সেবন বন্ধ করার পর তাদের মধ্যে তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধ্য করে।”
গবেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাঁজার কার্যকারিতা বেড়েছে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) -এর তথ্য অনুযায়ী, যারা গাঁজা ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে মনোযোগ, স্মৃতি এবং শেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাঁজা সেবনকে অনেকে স্বাভাবিক এবং নিরাপদ মনে করেন, তবে এটি একটি মাদক, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। তাই, কারো যদি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত এবং গাঁজা সেবনের বিষয়টি তাদের জানানো উচিত।
এই গবেষণাটি বাংলাদেশে গাঁজা সেবনের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: সিএনএন