হাইতিতে গ্যাং সহিংসতা: ‘ফিরে আসার পথ নেই’, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিতে গ্যাং সহিংসতা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মারিয়া ইসাবেল সালভাদর সতর্ক করে বলেছেন, দেশটি এখন ‘ফিরে আসার অযোগ্য’ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ ‘পূর্ণাঙ্গ বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হতে পারে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে সালভাদর বলেন, “গ্যাং সহিংসতা দেশের নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে হাইতির সাধারণ মানুষ ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আস্থা কমছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “হাইতি সম্ভবত সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার দিকে যাচ্ছে।” এই পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক সাহায্য অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাচ্ছে। একইসঙ্গে কলেরা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। সেখানকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, বিদ্রোহী গ্যাংগুলো যেকোনো সময় পোর্ট-অ-প্রিন্স দখল করে নিতে পারে।
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র এই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। হাইতির বিশাল এলাকা এখন প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গ্যাংদের দখলে, যারা নির্বিচারে মানুষ খুন, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গ্যাংগুলো পোর্ট-অ-প্রিন্স নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের অনুমোদন পাওয়া কেনিয়া নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গ্যাংদের দমনে ব্যর্থ হয়েছে। এই মিশনে ৬টি দেশ থেকে আসা প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে, যেখানে ২,৫০০ সদস্য থাকার কথা ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছেন, “রাজধানীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”
জাতিসংঘে নিযুক্ত হাইতির রাষ্ট্রদূত এরিক পিয়েরে বলেছেন, তার দেশ “ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “সশস্ত্র গ্যাং, মাদক পাচারকারী এবং অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত অপতৎপরতায় হাইতি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্যাংদের নির্মূল করার জন্য সাহায্য চেয়েছেন, যারা বর্তমানে সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাসে ২,৬৬০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের তিন মাসের তুলনায় ৪১.৩ শতাংশ বেশি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অ্যান্টি-গ্যাং অভিযানে নিহত হয়েছেন ৭১২ জন, যাদের মধ্যে ২১ শতাংশ নিরীহ বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এছাড়া, একই সময়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত পাঁচ মাসে সংঘটিত হওয়া ৩৪৭টি ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল সম্মিলিত ধর্ষণ, যা মোট ঘটনার ৬১ শতাংশ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান