বার্লিনের সবুজ প্রকৃতির সাক্ষী, ‘ডিকে মেরি’ : জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। বার্লিনের সবুজ অরণ্যে, শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাচীন ওক গাছ, যা স্থানীয়দের কাছে ‘ডিকে মেরি’ নামে পরিচিত, আজ জলবায়ু পরিবর্তনের এক চরম দৃষ্টান্ত।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এই অন্যতম প্রাচীন গাছটি, বর্তমানে দীর্ঘকাল ধরে চলা তীব্র খরা ও জলীয় বাষ্পের অভাবে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পরিবেশবিদদের মতে, এই সংকট শুধু একটি গাছের লড়াই নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের একটি প্রতিচ্ছবি।
টেগেল বনের গভীরে অবস্থিত ‘ডিকে মেরি’ গাছটির বয়স প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ বছর। গাছটির বিশালতা আজও অনেকের কাছে বিস্ময়কর।
গাছটির উচ্চতা প্রায় ১৮.৫ মিটার এবং এর কাণ্ডের ব্যাস ২ মিটারের কাছাকাছি। বার্লিনের এই ঐতিহ্যবাহী গাছটি শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না, এটি স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।
একসময় বার্লিন যখন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল, তখন এই বনভূমি ছিল শহরবাসীর জন্য এক শান্ত আশ্রয়স্থল।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। জার্মানির আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, এই বছর মার্চ মাস ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শুষ্ক মাসগুলোর একটি।
এপ্রিল মাসেও তেমন কোনো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে, যা বার্লিনের চারপাশের একটি বিশাল এলাকা, সেখানে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ১০-২০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, গাছটির স্বাস্থ্য দ্রুত কমতে শুরু করেছে। টেগেল বন বিভাগের প্রধান মার্ক ফ্রানুশ জানিয়েছেন, গাছটিকে বাঁচানোর জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, তবে তারা কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে নারাজ।
ঐতিহ্যপূর্ণ ‘ডিকে মেরি’র নামকরণ নিয়েও একটি গল্প প্রচলিত আছে। জানা যায়, হম্বোল্ট ভ্রাতৃদ্বয় তাঁদের প্রিয় রাঁধুনিকে সম্মান জানাতে এই গাছের এই নাম দেন।
এই গাছটি জার্মান ডেনড্রোলজিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক ২০২১ সালে ‘জাতীয় ঐতিহ্যবাহী গাছ’-এর স্বীকৃতি লাভ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু ‘ডিকে মেরি’ নয়, জার্মানির আরও অনেক প্রাচীন গাছপালা আজ হুমকির মুখে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন সেখানকার বন ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
এটি শুধু জার্মানির সমস্যা নয়, বরং সারা বিশ্বের পরিবেশের জন্য একটি অশনি সংকেত। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন, যাতে এমন ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা যায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian