টেসলার মুনাফায় বিশাল পতন হয়েছে, মে মাস থেকে সরকারি দায়িত্ব কমাচ্ছেন মাস্ক।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলার মুনাফায় বড় ধরনের পতন হয়েছে। একই সঙ্গে, আগামী মে মাস থেকে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে টেসলার রাজস্ব এবং মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মাস্কের সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে সমালোচনার কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপকালে মাস্ক জানান, সরকারের ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার’ কাজটি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্ভবত আগামী মাস থেকে ‘ডজ’-এ (সরকারের একটি বিভাগ) তার সময় দেওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। যদিও তিনি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজটি চালিয়ে যাবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট চাইবেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা থাকবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী ৩০ মে মাস্ক ‘ডজ’ থেকে বিদায় নেবেন। এর আগে, বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে তিনি ১৩০ দিনের বেশি কাজ করতে পারবেন না।
প্রথম প্রান্তিকে টেসলার রাজস্ব ৯ শতাংশ কমেছে। যেখানে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশার চেয়ে কম। শেয়ার প্রতি আয়ও ছিল প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম, মাত্র ২৭ সেন্ট। গত বছরের একই সময়ে যেখানে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৪৩ সেন্ট। এছাড়া, টেসলার মুনাফা ৭১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০৯ মিলিয়ন ডলারে। যেখানে আগের বছর এই সময়ে নিট আয় ছিল ১.৩৯ বিলিয়ন ডলার।
গাড়ি সরবরাহও ১৩ শতাংশ কমেছে, যা ২০২২ সালের পর থেকে কোম্পানির সবচেয়ে খারাপ ফল। এই প্রান্তিকে টেসলা মাত্র ৩,৩৬,৬৮১টি গাড়ি সরবরাহ করতে পেরেছে।
যদিও টেসলার জন্য সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, তবে ভবিষ্যতে কোম্পানির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, “টেসলার ভবিষ্যৎ আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল। আমাদের লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী মূল্যের এআই-চালিত রোবট তৈরি করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে সবার জন্য সুযোগ থাকবে এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। এটি একটি সুখী ভবিষ্যৎ, যা আমরা কল্পনা করতে পারি।”
মাস্কের এই ‘সুখী ভবিষ্যতে’ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এবং রোবট্যাক্সি সেবার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, এই বছর শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহরে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালু করা হবে। এছাড়া, আগামী বছর থেকে ব্যাপক পরিসরে রোবট্যাক্সি পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
যদিও টেসলা প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেনি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। কারণ, অনেক বিশ্লেষক আগেই তাদের প্রত্যাশা কমিয়ে এনেছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেসলার এই খারাপ অবস্থার পেছনে মাস্কের সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া একটি বড় কারণ। কারণ, এর ফলে টেসলার ব্র্যান্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক যদি দ্রুত তার সরকারি দায়িত্ব থেকে সরে এসে আগের মতো পুরো সময় টেসলার সিইও হিসেবে কাজ করেন, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
বর্তমানে টেসলার শেয়ারের দামও কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া, বিদ্যমান টেসলা মালিকরা তাদের গাড়ি বিক্রি করতে চাইছে। বিভিন্ন শহরে টেসলার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
অন্যদিকে, টেসলা কর্তৃপক্ষের দাবি, চাহিদার এই পতনের মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। তাদের মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ সাধারণত গাড়ি কেনার মতো বড় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছে।
তবে বিশ্লেষকরা এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে, মাস্ক যদি হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব ছাড়েন, তাহলে ব্র্যান্ডের ক্ষতি হলেও টেসলা তার প্রধান নির্বাহী হিসেবে মাস্ককে ফিরে পাবে, যিনি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
টেসলা জানিয়েছে, তারা আগামী কোয়ার্টারের জন্য কোনো পূর্বাভাস দেবে না। কারণ, গাড়ি এবং জ্বালানি সরবরাহ চেইনে বিশ্ব বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন হচ্ছে। তবে তারা সতর্ক করেছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে টেসলার পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান