প্রায় চল্লিশ বছর পর, বিলুপ্তপ্রায় একটি পাখি আবার বন্য পরিবেশে ডিম পাড়া শুরু করেছে।
এক সময়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সিহেক পাখি (যা গুয়াম কিংফিশার নামেও পরিচিত) কয়েক দশক পর আবার নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে। লন্ডন জুওলজিক্যাল সোসাইটি (ZSL) এবং দ্য নেচার কনজারভেন্সি (TNC)-এর মতে, এই পাখিগুলো হাওয়াই দ্বীপের পালমিরা অ্যাটল অভয়ারণ্যে তাদের নতুন পরিবেশে ডিম পাড়া শুরু করেছে।
১৯৮০-এর দশকে গুয়াম দ্বীপ থেকে এই পাখির প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, সিহেক পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অধীনে নয়টি তরুণ সিহেক পাখি – যাদের মধ্যে চারটি স্ত্রী এবং পাঁচটি পুরুষ ছিল – টিএনসি-এর পালমিরা অ্যাটল অভয়ারণ্যে অবমুক্ত করা হয়। এই পাখিগুলোকে অবমুক্ত করার আগে চিড়িয়াখানার কর্মীরা লালন-পালন করেন।
ZSL সহ বিভিন্ন সংরক্ষণবাদীর একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়।
পাখিগুলো তাদের নতুন পরিবেশে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ZSL এবং TNC জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া পাখিগুলোর মধ্যে আটটি জোড়া বেঁধেছে এবং তারা বাসা তৈরি করেছে।
এর মধ্যে তিনটি জোড়া ইতোমধ্যে বন্য পরিবেশে ডিম দিয়েছে, যা তাদের বিলুপ্তির পর প্রথম ঘটনা।
ZSL-এর ইনস্টিটিউট অফ জুওলজির অধ্যাপক জন ইউয়েন এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, “অনেক দশক ধরে সিহেক পাখিদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষার জন্য চলা মিশনে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ছোট্ট, নিরীহ দেখতে ডিমগুলো চকলেট ডিমের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।”
লন্ডন চিড়িয়াখানার পাখি রক্ষক শার্লট জেমস, যিনি পাখিগুলোকে হাতে করে বড় করেছেন, বলেন, “গত বছর এই পাখিগুলোর ছোট ডিম এবং ছানাদের দেখাশোনা করার পর, তাদের পালমিরা অ্যাটলের জঙ্গলে নিজেদের ছানা বড় করতে দেখাটা খুবই আনন্দের।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের উন্নতি দেখে গর্ব হয় এবং বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে সিহেককে ফিরিয়ে আনার মিশনে অংশ নিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।”
গুয়ামের আদিবাসী চামোরো সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পাখিকে সিহেক নামে ডাকত। ১৯৪০-এর দশকে ব্রাউন ট্রি সাপের আগমনের পর এই প্রজাতিটি হুমকির সম্মুখীন হয়।
১৯৮৮ সালে বন্য পরিবেশে শেষ সিহেক পাখিটি দেখা গিয়েছিল।
পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পরে, গুয়ামের জীববিজ্ঞানী একটি সংরক্ষণ প্রজনন কর্মসূচি শুরু করেন, যেখানে ২৯টি সিহেক পাখি ছিল।
স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের মতে, এই পাখি মাঝারি আকারের এবং শক্তিশালী ঠোঁটযুক্ত। তারা আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য পরিচিত।
গুয়ামের কৃষি বিভাগের জলজ ও বন্যপ্রাণী সম্পদ বিভাগের ইয়োলান্ডা টোপাসনা বলেন, “গুয়াহান সিহেক আমাদের জন্য তাদের গল্প লিখে চলেছে, যা ‘টুটুহান’-এর মাধ্যমে আরও উজ্জ্বল হচ্ছে! টুটুহান গত বছরের প্রথম বাচ্চা ছিল এবং এখন ডিম পাড়া শুরু করেছে।
তার নাম ‘শুরু’ এবং সে শুরু থেকেই শক্তিশালী ছিল, নিজের খাবার নিজে খেতে চেয়েছিল।”
তবে এরপর কী? ZSL এবং TNC জানিয়েছে, পাখিগুলোকে তাদের বাচ্চাদের কিভাবে বড় করতে হয়, তা শিখতে কিছু সময় লাগবে।
সম্ভবত ডিম পাড়ার কয়েক রাউন্ডের পরেই তারা তাদের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
এই গ্রীষ্মে আরও কিছু সিহেক পাখিকে পালমিরা অ্যাটলে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: পিপল