ব্রিটিশ বক্সিং জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক লড়াই আসন্ন, যেখানে ক্রিস ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন কনর বেন-এর। এই দ্বৈরথ শুধু একটি খেলার মঞ্চের লড়াই নয়, বরং এটি পিতার সূত্রে পাওয়া পুরনো এক প্রতিদ্বন্দিতার ধারাবাহিকতা।
নব্বইয়ের দশকে ক্রিস ইউব্যাঙ্ক সিনিয়র এবং নাইজেল বেন-এর মধ্যেকার লড়াইগুলো ব্রিটিশ ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিল, আর সেই লড়াইয়ের ছায়া যেন এখনো বিদ্যমান।
আসল লড়াইটি হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের অক্টোবরে, কিন্তু প্রতিপক্ষ কনর বেন-এর শরীরে নিষিদ্ধ ড্রাগ ‘ক্লোমিফেন’-এর উপস্থিতি ধরা পড়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এই ঘটনার পর প্রায় আড়াই বছর কেটে গেছে, অবশেষে টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়ামে আবারও লড়তে নামছেন এই দুই বক্সার।
খেলা শুরুর আগে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র জানিয়েছেন, এই লড়াইয়ের আকর্ষণ অনেক। কারণ, এখানে শুধু তাদের বাবারাই নন, বরং তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও জড়িয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, “আগের লড়াইয়ে আমরা লড়েছিলাম আমাদের বাবার সম্মান এবং পরিবারের নামের জন্য। আর এখনকার লড়াইটা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে। এই বিদ্বেষ মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছে, যার প্রমাণ হিসেবে ৬২,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে টিকিট বিক্রি হওয়াটাকেই ধরা যায়।”
কনর বেনকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ড্রাগ পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার পরও বেন নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে বিজ্ঞানসম্মত কোনো তথ্য দেননি।
যদিও বিশ্ব বক্সিং কাউন্সিল (ডব্লিউবিসি) জানিয়েছিল, বেন সম্ভবত ডিম বেশি খাওয়ার কারণে তার শরীরে ‘ক্লোমিফেন’-এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বেন এই যুক্তিতে রাজি হননি।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র বেনকে অপমান করার জন্য ডিম ছুড়ে মেরেছিলেন।
ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র জানিয়েছেন, “আমি চেয়েছিলাম তাকে সকলের সামনে হেয় করতে। বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, সে যে একজন চিটিংবাজ, সেটা যেন সবাই মনে রাখে। এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন, যারা ধরা পড়ার পরও এখনো খেলছেন, কিন্তু তাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না।
আমি বেনকে সেই সুযোগ দিতে চাইনি। আমি চেয়েছি, সে সারা জীবন একজন চিটার হিসেবে পরিচিত থাকুক।”
এই লড়াইয়ের আগে বেনকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি যেন তার আগের সেই ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে, ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
ওজন কমানোর এই প্রক্রিয়াটি তার জন্য বেশ কষ্টের। তিনি জানান, “আমি জানি এটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তবে একজন বক্সার হিসেবে এটাই আমাদের কাজ। এত টাকা কামানোর জন্য কিছু তো ত্যাগ করতে হবে।
আর সেই ত্যাগের একটি হলো নিজেকে না খাইয়ে দুর্বল করে ফেলা।”
এই লড়াইয়ের আগে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র এবং তার বাবার মধ্যে সম্পর্ক ভালো নেই। ক্রিস ইউব্যাঙ্ক সিনিয়র এই লড়াইকে তার ছেলের জন্য ‘অসম্মানজনক’ বলে মনে করেন।
তবে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র মনে করেন, এই লড়াইয়ে জয় পেলে হয়তো বাবার মন জয় করা সম্ভব হবে।
ব্যক্তিগত জীবনে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়রের ভাই, যিনি ২০১৯ সালে মারা যান, তাঁর সন্তানের প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা।
তিনি জানান, “আমি যখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকি, তখন রাহিমের (ভাইয়ের ছেলে) সঙ্গে অনেক সময় কাটাই। তাকে পার্কে নিয়ে যাই, শপিং মলে ঘুরি, এমনকি একসঙ্গে স্কেটিংও করি।
ও খুবই ভালো একটা মানুষ, যা আমাকে আগে কখনও অনুভব করতে হয়নি, তেমন এক আনন্দ দেয়।”
এই কঠিন লড়াইয়ের আগে ইউব্যাঙ্ক জুনিয়র বলেছেন, “বক্সিংয়ের ব্যবসায়িক দিকটা হয়তো নিন্দনীয়, তবে খেলাটা সবসময় মহৎ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি যদি কনর বেনকে হারাতে না পারি, তাহলে অবসর নেব। তাই আমি জিততে চাই।
আমি বক্সিং ভালোবাসি। খেলাটাকে ভালোবাসি। তাই এই লড়াইটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান