ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল এবং মেটাকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করেছে। ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (ডিএমএ) লঙ্ঘনের দায়ে এই জরিমানা করা হয়েছে, যা প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। নতুন এই আইনটি বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
ডিজিটাল বাজারের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক এই আইনে লঙ্ঘনের জন্য অ্যাপলকে প্রায় ৫৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। অ্যাপল তাদের অ্যাপ ডেভেলপারদের ব্যবহারকারীদের কাছে বিকল্প বিক্রয় এবং অফার সম্পর্কে তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল।
অন্যদিকে, মেটাকে তাদের বিতর্কিত “পেই অর কনসেন্ট” মডেলের জন্য প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। এই মডেলের অধীনে, ইইউ-এর ব্যবহারকারীদের হয় বিজ্ঞাপন-মুক্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের জন্য অর্থ দিতে হবে, অথবা লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিতে হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) এক বছরব্যাপী তদন্তের পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিএমএ গত বছর কার্যকর হয়। অ্যাপলকে জুনের শেষ নাগাদ তাদের অ্যাপ স্টোর পরিচালনায় পরিবর্তন আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যদি তারা এই নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়, তবে প্রতিদিনের জন্য তাদের জরিমানা করা হতে পারে। একই সাথে, মেটা তাদের পরিবর্তিত মডেল নিয়ে আসা পরিবর্তনগুলো ডিএমএ’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, তা খতিয়ে দেখছে কমিশন।
ইসি জানিয়েছে, এই জরিমানাগুলো মূলত একটি প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ এবং পূর্বে ইইউ-এর অ্যান্টিট্রাস্ট (প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যকলাপ) আইনের অধীনে আরোপিত জরিমানার তুলনায় কম। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারকারী কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা।
গত বছর, অ্যাপলকে সঙ্গীত স্ট্রিমিংয়ে তাদের প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহারের জন্য ১.৮ বিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল। মেটাকে তাদের সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন পরিষেবার প্রচারের জন্য ৭৯৭ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল।
তবে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতে এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যারা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করে।
ফেব্রুয়ারিতে, হোয়াইট হাউস হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে তারা ইইউ-এর ডিজিটাল সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন, যেমন ডিএমএ এবং অনলাইন ভুল তথ্য প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রণীত ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের (ডিএসএ) প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা বিবেচনা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। মেটা বর্তমানে তাদের অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা দমিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ তাদের ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হতে পারে।
অ্যাপল এবং অ্যামাজনও অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখোমুখি। গুগল ইন্টারনেট অনুসন্ধান এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে তাদের আধিপত্যের কারণে গত বছর দুটি বড় ধরনের পরাজয় স্বীকার করেছে।
মেটা ইউরোপীয় কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর একটি “লক্ষ্যযুক্ত আক্রমণ”।
এই ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের প্রযুক্তি বাজারের ওপরও পড়তে পারে। ভবিষ্যতে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর নিয়ম-কানুন তৈরি এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপগুলো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
এর ফলে, ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা এবং অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা