ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ডিজিটাল বাজার আইন (ডিএমএ) লঙ্ঘনের দায়ে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ও মেটাকে বড় অংকের জরিমানা করেছে ইউরোপীয় কমিশন। এই প্রথম ডিএমএ-এর আওতায় কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
অ্যাপলকে প্রায় ৫00 মিলিয়ন ইউরো এবং মেটাকে 200 মিলিয়ন ইউরোর বেশি জরিমানা করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোরের বাইরে ডেভেলপারদের অ্যাপ বিতরণে বাধা দিচ্ছিল। এর ফলে গ্রাহকরা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে কম দামে অ্যাপ কেনার সুযোগ পাচ্ছিল না।
অন্যদিকে, মেটা তাদের ‘সম্মতি দিন অথবা মূল্য পরিশোধ করুন’ মডেলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডেটা ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডিএমএ-এর নিয়ম ভাঙছে। এই মডেলের অধীনে, ব্যবহারকারীদের হয় তাদের ডেটা বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে, অথবা বিজ্ঞাপনমুক্ত পরিষেবা পেতে হলে ফি দিতে হবে।
ডিজিটাল বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এবং ব্যবহারকারীদের অধিকার সুরক্ষায় ইইউ এই ডিএমএ আইন তৈরি করেছে। এই আইনের অধীনে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের পছন্দকে সম্মান জানাতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি ইউরোপে ব্যবসা করে এবং তারা প্রায়ই ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ধরনের নিয়ম-নীতির বিরোধিতা করে থাকে।
ইউরোপীয় কমিশনের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, এই জরিমানার মূল উদ্দেশ্য হলো, ইইউ-এর বাজারে ব্যবসা করা সব কোম্পানির জন্য একই নিয়ম নিশ্চিত করা। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যাতে তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসা ব্যবহারকারী এবং গ্রাহকদের ওপর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চাইছে ইইউ।
তবে, মেটা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে। মেটার একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ইউরোপীয় কমিশন তাদের ব্যবসার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এবং এর ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে ভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ভোক্তা সংস্থা। তাদের মতে, অ্যাপল ও মেটা উভয় কোম্পানিরই ডিএমএ আইন মেনে চলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।
এই ঘটনার পর, প্রযুক্তি বাজারের ভবিষ্যৎ এবং ডেটা সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এই ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান