মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে গবেষণা এবং উদ্ভাবনে যে প্রভাব পড়তে পারে, সেই বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
খবরটি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে এর কিছু প্রভাব আলোচনা করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের নীতি-নির্ধারণের প্রভাব অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের দেশেও অনুভূত হয়।
সম্প্রতি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফেডারেল ফান্ড বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি (Diversity, Equity, and Inclusion programs) বাতিল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ফেডারেল সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে বেআইনি এবং সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করেছে।
হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের গবেষণা কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে, যা চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতিতে সহায়ক।
উল্লেখ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এন্ডাউমেন্টের (Endowment) পরিমাণ প্রায় ৫৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শুধু হার্ভার্ডই নয়, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মতো আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপরও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল প্রায় $400 মিলিয়ন ডলার এবং ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা সরকারি অনুদান বন্ধের নির্দেশ (Stop Work Order) পেয়েছে, যার ফলে প্রায় ১০০টি ফেডারেল গ্রান্টের (Grant) কাজ বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই তহবিল বন্ধের ফলে তাদের গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, এই গবেষণাগুলো শুধু একাডেমিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায়ও সহায়ক।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনেও এসব গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিদ্যমান এন্ডাউমেন্টের ওপর নির্ভর করার চেষ্টা করছে। তবে, এই ধরনের তহবিলের ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এছাড়া, অনেক দাতা তাদের অনুদান প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল কমে যাওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আয়ের উৎস বাড়ানোর জন্য শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর প্রভাব শুধু আমেরিকার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বজুড়ে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ও গবেষণার নীতি পরিবর্তনের প্রভাব অনুভূত হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা