ভ্যাটিকান সিটির আশেপাশে, পোপ ফ্রান্সিসকে সাধারণ মানুষের মতোই মিশতে দেখা যেত। তিনি ছিলেন পরিচিত এক বন্ধু, যিনি প্রায়ই স্থানীয় দোকানগুলোতে যেতেন। সেখানকার দোকানদারদের কাছে তিনি শুধু একজন ধর্মগুরু বা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না, বরং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে তারা তার জন্য প্রার্থনা করেছেন এবং এখন তাকে খুব মিস করেন।
আর্জেন্টিনার একজন আইসক্রিম বিক্রেতা সেবাস্তিয়ান প্যাড্রন জানান, পোপ ফ্রান্সিস সাত বছরের বেশি সময় ধরে তার নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। প্যাড্রনের দোকানটি ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের সাধারণ হোটেল কক্ষের কাছেই অবস্থিত। তিনি জানান, পোপ প্রায়ই তার সন্তানদের উপহার দিতেন, যার কারণে তাদের পরিবারের সঙ্গে পোপের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
প্যাড্রন আরও বলেন, “সেই স্মৃতিগুলো খুবই সুন্দর, আর তাই এটা এত বেশি কষ্টের।” পোপ ফ্রান্সিসের মিষ্টি খাবারের প্রতি দুর্বলতা ছিল, বিশেষ করে প্যাড্রনের তৈরি ‘দালসে দে লেচে’ আইসক্রিম তার খুব পছন্দের ছিল।
২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের পাশে অবস্থিত বিশাল পোপের বাসভবন এপোস্টলিক প্যালেসের পরিবর্তে ডমাস সান্টা মার্টা হোটেলে থাকতে শুরু করেন। এই সিদ্ধান্ত ছিল বিলাসিতা থেকে দূরে থাকার এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি সাধারণ হ্যাচব্যাক গাড়িতে করে রোমে ঘুরে বেড়াতেন এবং জুতার সোল কেনা, চশমার লেন্স পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে নিজের দেশ আর্জেন্টিনার ক্লাসিক্যাল মিউজিক ও ট্যাঙ্গো গানের রেকর্ডও কিনতেন। বুয়েনস আইরেসে তিনি যেমন অবাধে চলাফেরা করতে পারতেন, সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মাঝে মাঝে তিনি দুঃখ প্রকাশ করতেন।
পোপের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মরণ করে রোমের একজন দর্জি র্যানিয়েরি মানচিনেলি বলেন, “আমি এমন একজন মানুষকে দেখেছি যিনি সবসময় হাসতেন এবং খুবই মিশুক ছিলেন।” মানচিনেলি জানান, তিনি আগের তিনজন পোপের পোশাক তৈরি করেছেন।
তবে পোপ ফ্রান্সিস চেয়েছিলেন সবকিছু সহজ, ব্যবহারিক এবং সাশ্রয়ী হোক।
মানচিনেলি আরও জানান, তিনি পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগে ফ্রান্সিসকে একটি কার্ডিনালের পোশাক তৈরি করে দিয়েছিলেন। পোশাকটির দাম শুনে ফ্রান্সিসের প্রতিক্রিয়া ছিল, “র্যানিয়েরি, তুমি একটু বেশি দাম রাখছ।” নিজের কার্ডিনালের পোশাকের বিষয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, বুয়েনস আইরেসের আর্চবিশপ থাকাকালীন তার পূর্বসূরির কাছ থেকে পাওয়া।
পোপ ফ্রান্সিস বেশ কয়েকবার রোমের ঐতিহাসিক অঞ্চলের একটি অপটিকের দোকানে গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন।
দোকানের মালিক লুকা স্পিয়েজিয়া জানান, ২০১৫ সালে পোপ যখন তার দোকানে আসেন, তখন তিনি নিজেকে “ফ্রান্সেস্কো” নামে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাকে নতুন চশমা নিতে বললে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পুরোনো ফ্রেমেই নতুন লেন্স লাগানোর কথা বলেন। এমনকি তিনি এর জন্য বিল পরিশোধ করতেও রাজি ছিলেন।
স্পিয়েজিয়া বলেন, “তিনি কখনোই অনুভব করতে দেননি যে তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি, যদিও তিনি ছিলেন চার্চের প্রধান।” তিনি আশা করেন, পরবর্তী পোপও একই রকম আচরণ বজায় রাখবেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস