বিশ্বের ধনী দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা দ্রুত করার আহ্বান জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর গড়িমসি এবং জলবায়ু অর্থায়নে প্রতিশ্রুতি পূরণে অনীহার কারণে চরম ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নিরাপত্তা আরও বেশি হুমকির মুখে পড়ছে।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, সকল দেশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের নতুন পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। কিন্তু অনেক দেশের ক্ষেত্রেই তা সময় মতো জমা পড়েনি। এরই মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো উন্নত দেশগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা চাইছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ দরিদ্র দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার জন্য ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দ্রুত পূরণ করা হোক।
দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দ্বীপগুলোর নিরাপত্তা উন্নত দেশগুলোর সম্মিলিত অঙ্গীকারের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে তাদের আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত দেশগুলোর নেতারা যদি এখনই পদক্ষেপ না নেন, তাহলে এর ফল হবে ভয়াবহ।
গত বছর মিশরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৭) ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জলবায়ু বিষয়ক আলোচনা থেকে এক প্রকার বেরিয়ে এসেছিল। তারা চাইছে, আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ-৩০ সম্মেলনের আগেই উন্নত বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিক।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে প্রতিটি দেশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দেশগুলোর বর্তমান অঙ্গীকার অনুযায়ী, তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দেশগুলোকে তাদের জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ দেশ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা জমা দিতে পারেনি। এনডিসি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি দেশের জাতীয় পরিকল্পনা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গ্রীষ্মের আগে তাদের এনডিসি জমা দেবে না। চীনও জানিয়েছে, তারা কপ-৩০ সম্মেলনের আগে তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করবে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি তারা।
দ্বীপরাষ্ট্রগুলো বলছে, সময় ফুরিয়ে আসছে। বিশেষ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রানির্ভর এনডিসি জমা দিতে হবে। সেই সঙ্গে কার্বন অফসেটের পরিবর্তে দেশীয় কার্বন হ্রাসের ওপর জোর দিতে হবে।
দ্বীপরাষ্ট্রগুলো আরও বলেছে, যদি এনডিসিগুলো পর্যাপ্ত না হয়, তবে কপ-৩০ সম্মেলনে তা সংশোধন করতে হবে। এছাড়া, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়েও বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর অনীহা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই, এই মুহূর্তে পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি হলে বিপর্যয় আরও বাড়বে। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশের ক্ষতি, খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক পতন এবং ব্যাপক অভিবাসনের মতো ঘটনাগুলো আমাদের সামনে দৃশ্যমান। তাই একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন মানবতা, দূরদৃষ্টি এবং সহযোগিতার মানসিকতা।
সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের জ্বালানিসচিব এড মিলিব্যান্ড বলেছেন, জলবায়ু নীতি শক্তিশালী না হলে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্যসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে তাদের এনডিসি জমা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনডিসি যেন সুনির্দিষ্ট নীতি-নির্ভর হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান