আমাদের চারপাশে এমন একটি অদৃশ্য জগৎ রয়েছে, যা আমরা সচরাচর দেখতে পাই না। এই জগৎটি হলো ‘আভা’ বা ‘ওরা’। এটি এক ধরনের শক্তি ক্ষেত্র, যা সকল জীবিত বস্তুর চারপাশে বিদ্যমান থাকে।
মানুষের আবেগ, চিন্তা এবং অভিজ্ঞতার একটি প্রতিচ্ছবি হলো এই আভা। সম্প্রতি, এই আভার রঙ এবং এর তাৎপর্য নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই জানতে চান, কীভাবে নিজের আভার রঙ খুঁজে বের করা যায় এবং এর মাধ্যমে নিজেদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যায়।
আভার ধারণাটি আসলে কী? বিশেষজ্ঞরা বলেন, আভা হলো আমাদের চারপাশে থাকা একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র। এটি আমাদের ভেতরের সম্ভাবনা, আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতির একটি প্রতিফলন।
এই আভায় বিভিন্ন রঙের উপস্থিতি আমাদের শরীরের ভেতরের শক্তি কেন্দ্র বা চক্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। শরীরে সাতটি প্রধান চক্র রয়েছে, যা মেরুদণ্ড বরাবর বিস্তৃত এবং শরীরের প্রধান শক্তি প্রবাহের পথ হিসেবে কাজ করে। এই চক্রগুলি আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন – সম্পর্কের গভীরতা, আত্ম-উপলব্ধি, সৃজনশীলতা এবং আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জড়িত।
আভার রঙগুলো আসলে কিভাবে গঠিত হয়? আমাদের আবেগ এবং অনুভূতির পরিবর্তনের সঙ্গে সাথে আভায় রঙের পরিবর্তন হয়। উদাহরণস্বরূপ, কারো হৃদচক্র সক্রিয় থাকলে তার আভায় গোলাপী রঙ দেখা যেতে পারে।
আবার, কোনো ব্যক্তি যদি নতুন কিছু শুরু করতে দ্বিধা বোধ করে, তাহলে তার মূল চক্রে সবুজ আভা দেখা যেতে পারে, যা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
তাহলে, নিজের আভার রঙ জানার উপায় কী? এর একটি উপায় হলো ‘আভা ফটোগ্রাফি’ করানো। এই পদ্ধতিতে বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে আপনার আভার ছবি তোলা হয়, যা আপনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
এছাড়া, আপনি চাইলে নিজের অনুভূতি এবং উপলব্ধির মাধ্যমেও আপনার আভার রঙ খুঁজে বের করতে পারেন। এক্ষেত্রে, ধ্যান বা জার্নালিংয়ের মাধ্যমে নিজের ভেতরের প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে। দিনের শেষে নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘আজ আমার শক্তির রঙ কি ছিল?’
আপনার অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে আসা এই রঙটি আপনার ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
আভার রঙগুলোর কিছু সাধারণ অর্থ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লাল রঙ সাধারণত শারীরিক শক্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কমলা রঙ সৃজনশীলতা এবং আবেগের প্রতীক।
হলুদ রঙ আত্মবিশ্বাস ও বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত দেয়। সবুজ রঙ বৃদ্ধি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের প্রতীক। নীল রঙ যোগাযোগ এবং প্রশান্তির সঙ্গে জড়িত। বেগুনী রঙ আধ্যাত্মিকতা এবং উপলব্ধির প্রতীক। আর সাদা রঙ বিশুদ্ধতা ও ঐশ্বরিক চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
নিজের আভা সম্পর্কে সচেতন হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি আত্ম-সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিজের আভাকে বোঝা আমাদের মানসিক শান্তির জন্য প্রয়োজনীয়, যা আমাদের জীবনের ভালো দিকগুলো অনুভব করতে এবং নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, এটি আমাদের ভেতরের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে।
আভার ধারণা হয়তো অনেকের কাছে নতুন। তবে, এটি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে গভীর ধারণা পেতে এবং একটি সুখী জীবন ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে। তাই, নিজের আভাকে জানার চেষ্টা করা এবং সে অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: People