কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যার মূলে রয়েছে একটি ভয়াবহ হামলা। গত সপ্তাহে কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন, যা উভয় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলেছে।
ভারতীয় সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, মঙ্গলবার (যেহেতু তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ওপর পাকিস্তানি সেনারা একাধিক স্থান থেকে গুলি চালায়। এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত মঙ্গলবার, ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে একদল বন্দুকধারী পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়। জানা যায়, হামলাকারীরা নিহতদের হিন্দু ও মুসলিম পরিচয় জানতে চেয়েছিল এবং হিন্দুদের গুলি করে হত্যা করে। এর পরেই উত্তেজনা আরও বাড়ে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর প্রতিরোধ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। ভারত সরকার এই গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করব এবং তাদের শাস্তি দেব।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, “পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।” একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, “পাকিস্তানের বাহিনী ভারতের যেকোনো ‘দুঃসাহসিক’ পদক্ষেপ প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জল-বণ্টন চুক্তি। পাশাপাশি, ভারত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং তাদের ভিসা বাতিল করেছে। এর জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ভারতীয়দের ভিসা বাতিল এবং তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এছাড়াও, তারা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিও স্থগিত করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
ভারতের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের পর তারা নিশ্চিত করতে চাইছে যে নদীর এক ফোঁটা জলও যেন পাকিস্তানে না যায়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, জল বন্ধ করার কোনো চেষ্টা ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ শামিল হবে।
পাকিস্তানের পিপলস পার্টির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, “হয় আমাদের জল প্রবাহিত হবে, না হয় তাদের রক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর জলপ্রবাহ বন্ধ করতে হলে বড় ধরনের বিনিয়োগ এবং দীর্ঘ সময় দরকার। বিশ্লেষক ব্রক্ষ্ম চেলানির মতে, “ভারতের স্বল্প মেয়াদে পাকিস্তানের দিকে জল সরবরাহ বন্ধ করার মতো অবকাঠামো নেই। তাই এই পদক্ষেপ মূলত প্রতীকী।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান