চীনের অভিবাসন প্রত্যাখ্যাতদের বেদনাগাথা: এক নতুন ব্যালে’র জন্ম। সানফ্রান্সিসকো উপসাগরের মাঝে অবস্থিত অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড।
এক সময়ের এই দ্বীপটি ছিল অভিবাসন প্রত্যাখ্যাতদের বন্দীশালা। ১৯১০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে, এখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিলেন চীন থেকে আসা মানুষ।
তাঁদের দুঃসহ জীবন এবং বঞ্চনার ইতিহাস নিয়েই এবার তৈরি হয়েছে একটি ব্যালে, যার নাম ‘দ্য অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড প্রজেক্ট’। আমেরিকার ওকল্যান্ড ব্যালে কোম্পানির এই নতুন প্রযোজনাটি মূলত সেইসব চীনা অভিবাসীদের উৎসর্গীকৃত, যাঁরা একসময় এই দ্বীপে বন্দী ছিলেন।
চীনাদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য তৈরি হওয়া ‘চায়নিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্ট’-এর শিকার হয়েছিলেন তাঁরা। অত্যাচারের প্রতিবাদে সেখানকার বন্দীরা তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ এবং বেদনার কথাগুলি দ্বীপের দেওয়ালে খোদাই করে লিখে গিয়েছিলেন।
সেইসব কবিতা, তাঁদের জীবনের গল্পগুলোই এই ব্যালে’র অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ব্যালে’টির প্রধান আকর্ষণ হলো একজন নর্তকী, যাঁর ৪০ ফুটের লম্বা বেণী তাঁর অতীতের সঙ্গে বর্তমানের যোগসূত্র স্থাপন করে।
এই বেনী যেন এক সুদীর্ঘ পথ, যা নর্তকীকে তাঁর জন্মভূমি এবং অতীতের সঙ্গে বেঁধে রাখে। কখনও এটি একগুচ্ছ স্মৃতির প্রতীক, আবার কখনও বা নিপীড়নের শিকল।
এই ব্যালে’র মূল ভাবনা এসেছে অভিবাসন, জাতিগত বৈষম্য, স্মৃতি এবং ঘুরে দাঁড়ানোর মতো বিষয়গুলো থেকে। এখানে এশীয়-আমেরিকান শিল্পী ও কোরিওগ্রাফারদের (নৃত্য পরিচালক) কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
চীনের খ্যাতিমান সুরকার হুয়াং রুও-এর (Huang Ruo) সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। ডেল সোল কোয়ার্টেট (Del Sol Quartet) এই ব্যালে’র জন্য গান গেয়েছেন, যেখানে মূল কবিতাগুলো ম্যান্ডারিন এবং ইংরেজি ভাষায় পরিবেশিত হয়েছে।
আর্টিস্টিক ডিরেক্টর গ্রাহাম লুস্টিগ (Graham Lustig) জানান, কোভিড মহামারীর সময় তাঁর এক নর্তকীর প্রতি হওয়া বর্ণবিদ্বেষী আচরণের পরই তিনি এই ব্যালে তৈরির কথা ভাবেন। আমেরিকায় এশীয়-বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তাঁর এই উদ্যোগ।
শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন এই ব্যালে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) আমলে অভিবাসীদের আটকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ডের ইতিহাসের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এই ব্যালে’র একটি অংশে টাইটানিক জাহাজ থেকে বেঁচে ফেরা ছয়জন চীনা নাবিকের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ১৯১২ সালে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর তাঁদের আমেরিকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
তাঁদের এই বঞ্চনার কাহিনি আজও অনেকের কাছে গভীর বেদনার কারণ। ‘দ্য অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড প্রজেক্ট’ শুধু একটি ব্যালে নয়, বরং এটি এক গভীর উপলব্ধির জন্ম দেয়।
এর মাধ্যমে অভিবাসন প্রত্যাখ্যাতদের প্রতি সম্মান জানানো হয়, ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা হয় তাঁদের যন্ত্রণা, আর তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পগুলো মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian