দৌড়ের মহোৎসব: কেন ম্যারাথন দৌড় এখন বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয়?
বিশ্বজুড়ে ম্যারাথন দৌড়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, যা এখন এক উল্লেখযোগ্য প্রবণতা। সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত ম্যারাথনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ তারই প্রমাণ।
এই দৌড় শুধু শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নয়, বরং এটি এখন অনেকের কাছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে মানুষজন এই ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন।
অনেকের কাছে, ম্যারাথন হলো প্রিয়জনদের হারানোর শোক ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। কেউ প্রিয়জনের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে, আবার কেউ কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ানো কোনো সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এই দৌড়ে অংশ নেন।
লন্ডনের ম্যারাথন শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকার বেশি) সংগ্রহ করেছে, যা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাকে সাহায্য করেছে।
আবার অনেকেই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে বা ব্যক্তিগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৌড়কে বেছে নিচ্ছেন। দৌড় তাদের জীবনে শৃঙ্খলা আনে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
এমনই একজন হলেন ৪ বছর আগে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মেয়েকে হারানো জুলি রাইট। মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
পরে তিনি যখন দৌড় শুরু করেন, তখন এটি তাকে শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছানোর আনন্দ উদযাপন করতে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার নাও-এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি ম্যারাথনে অংশ নেন।
শুধু বয়স্ক মানুষই নন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ম্যারাথন দৌড়ের আগ্রহ বাড়ছে। ১৯ বছর বয়সী যমজ বোন, কেটি এবং আনা রাওল্যান্ড তাদের প্রয়াত বাবার স্মরণে একটি হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন।
তাদের বাবার শেষ দিনগুলোতে ওই হাসপাতালটিই সেবা-শুশ্রূষা জুগিয়েছিল।
অন্যদিকে, ডেভিড ওয়েদারিল নামের একজন প্যারা table tennis খেলোয়াড়, যিনি Crutches ব্যবহার করে দ্রুততম ম্যারাথন দৌড়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান। তার ভাষায়, দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগের গবেষণা ফান্ডে অর্থ যোগাতে তিনি এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছেন।
একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক কষ্টের চূড়ান্ত পরীক্ষা হলো ম্যারাথন। কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়।
এই সময়টাতে কাজ এবং পরিবারের প্রতি মনোযোগ বজায় রেখে ভারসাম্য আনা কঠিন।
তবে, যারা ম্যারাথনে অংশ নেন, তাদের অনেকেই জানান, এর মাধ্যমে তারা অনেক আনন্দ পান। তারা তাদের কষ্টের কথা ভুলে যান এবং নতুন করে বাঁচতে শেখেন।
তারা সমাজের জন্য কিছু করতে চান, মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান।
শুধু তাই নয়, এখন ম্যারাথন দৌড় আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজলভ্য হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন রান ক্লাব এবং ‘পার্করান’-এর মতো আয়োজন দৌড়কে সবার কাছে আরও বেশি পরিচিত করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত বছরে লন্ডন ম্যারাথনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। শুধু লন্ডন নয়, নিউ ইয়র্ক সিটিতেও ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
দৌড় এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলনের মতো, যা মানুষকে একত্রিত করে এবং তাদের জীবনে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন