দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী, মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস ইয়র্কটাউন, যা প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, সম্প্রতি সেটির ভেতরের কিছু অনুসন্ধানে হতবাক হয়েছেন গবেষকরা।
১৯৪২ সালের জুন মাসে মিডওয়ে যুদ্ধের সময় একটি জাপানি সাবমেরিনের আক্রমণে এই বিশাল জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) এবং তাদের সহযোগী দল এপ্রিল মাসের ১৯ ও ২০ তারিখে গভীর সমুদ্রের এই ধ্বংসাবশেষের অনুসন্ধানে নামে।
বিশেষভাবে সজ্জিত একটি রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল (ROV) ব্যবহার করে তারা জাহাজের হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করে।
সেখানেই তাদের চোখে পরে একটি পুরোনো, বিস্ময়কর বস্তু—১৯৪০-৪১ সালের একটি ফোর্ড সুপার ডিলাক্স গাড়ি, যা সাধারণত “উডি” নামে পরিচিত।
গাড়িটির সামনের প্লেটে “SHIP SERVICE _ NAVY” কথাটি লেখা ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, এই গাড়িটি হয়তো তৎকালীন সময়ে ইউএসএস ইয়র্কটাউনের ক্যাপ্টেন অথবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ নৌ-কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন।
তবে গবেষকদের সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে অন্য একটি বিষয়।
যুদ্ধজাহাজটি যখন মিডওয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, তার আগে পার্ল হারবারে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য মেরামতের জন্য রাখা হয়েছিল।
সেই সময়ও কেন এই গাড়িটি জাহাজ থেকে নামানো হয়নি, তা এখনো একটি রহস্য।
গাড়ি ছাড়াও, গবেষকরা জাহাজের ভেতরে আরও কিছু চমকপ্রদ জিনিস খুঁজে পেয়েছেন।
প্রথমবারের মতো তারা একটি হাতে আঁকা বিশাল আকারের দেয়ালচিত্র (mural) আবিষ্কার করেছেন।
এই চিত্রটি জাহাজের একটি এলিভেটর শ্যাফটের ভেতরে আঁকা ছিল, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪২ ফুট এবং প্রস্থ ১২ ফুট।
চিত্রটিতে বিশ্ব মানচিত্র খোদাই করা হয়েছে, যা ইয়র্কটাউনের বিভিন্ন সমুদ্রযাত্রার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে।
এছাড়াও, জাহাজের ভেতর পাওয়া গেছে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে একটি ডগলাস এসবিডি ডনটলেস ডুবুরি বোমারু বিমান, যা এখনো তার বোমা বহন করার স্থানে সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
আর গভীর সমুদ্রের এই ধ্বংসাবশেষে নতুন জীবনের সন্ধানও মিলেছে।
গবেষকরা একটি বিরল প্রজাতির লাল জেলিফিশ আবিষ্কার করেছেন, যা সম্ভবত আগে দেখা যায়নি।
গবেষকরা বলছেন, এই অনুসন্ধানগুলি গভীর সমুদ্রের পরিবেশ এবং সময়ের সাথে এর পরিবর্তনগুলি বুঝতে সাহায্য করবে।
ইউএসএস ইয়র্কটাউনের ভেতরের এই আবিষ্কারগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং নৌ-ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: পিপল