যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করা এক দম্পতির জীবনে নেমে আসে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। তাদের নতুন ফ্ল্যাটে থাকা অবস্থায়, সেখানকার সিলিংয়ের ভেন্টে জমা হওয়া কালো ছোপ নিয়ে সন্দেহ হয় তাঁদের।
প্রথমে বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এটিকে মোমবাতির ধোঁয়া বলে উড়িয়ে দিলেও, পরে পরীক্ষা করে জানা যায়, এটি আসলে ছিল মারাত্মক ছত্রাক, যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ফ্লোরিডার বোকা র্যাটনে বসবাস করা হ্যালি ফক্স এবং তাঁর স্বামী জন, ২০২০ সালের মে মাসে একটি অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বসবাস শুরু করেন। শুরুতে সবকিছু বেশ ভালোই ছিল।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অ্যাপার্টমেন্টটিতে তাঁরা ছিলেন বেশ খুশি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের শরীরে দেখা দিতে শুরু করে নানা উপসর্গ।
হ্যালির চোখে জল আসা, সাইনাসের সমস্যা, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও, তিনি মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা এবং শরীরে দুর্বলতা অনুভব করতে শুরু করেন।
তাঁর স্বামী জনও মারাত্মক ক্লান্তিবোধ করতেন। এমনকি, তিনি অ্যাগোরাফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, যা তাঁর উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
হ্যালির অসুস্থতা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তিনি টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন এবং অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চান।
তাঁর ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই সিলিংয়ের ভেন্টের কালো দাগগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের পরামর্শে, হ্যালি একটি স্বাধীন পরীক্ষকের মাধ্যমে সেই স্থানটি পরীক্ষা করান।
পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, সেখানে মারাত্মক বিষাক্ত ছত্রাক বাসা বেঁধেছে।
আবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানালে তারা প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তাদের মতে, এটি মোমবাতির কারণে হয়েছে।
কিন্তু পরীক্ষার ফল তাঁদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হ্যালি জানান, এই ছত্রাকের কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল।
এমনকি, তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর সাইনাস সার্জারি পর্যন্ত করাতে হয়।
অবশেষে, তাঁরা বোকা র্যাটনের অ্যাপার্টমেন্টটি ছেড়ে কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ডে চলে যান।
নতুন স্থানে আসার পরেই হ্যালির শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হতে শুরু করে। তাঁর ত্বকের ফুসকুড়ি সেরে যায় এবং শরীরে আগের মতো শক্তি ফিরে আসে।
জনের অ্যাগোরাফোবিয়ার সমস্যাও কমে যায়।
এই ঘটনার পরে, হ্যালি তাঁর প্রতিবেশী এবং পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানান, তাঁরাও একই ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার শিকার।
কারো কারো মতে, তাঁদের পোষা প্রাণীর মধ্যেও এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে। তাঁরাও যখন বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তাঁদেরকে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্দ্রতা এবং দুর্বল বায়ু চলাচল এর কারণে অনেক সময় অ্যাপার্টমেন্ট বা বাসাবাড়িতে ছত্রাক জন্মায়। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
তাই, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য বাসস্থানের পরিবেশের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
হ্যালির এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা, যা আমাদের বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করবে।
তথ্য সূত্র: পিপল