প্যারিসে ২০১৬ সালে মার্কিন তারকা কিম কার্দাশিয়ানের (Kim Kardashian) আলোচিত হীরার গহনা চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত এক অভিযুক্ত। আগামী সোমবার প্যারিসে এই মামলার বিচার শুরুর কথা রয়েছে।
৭০ বছর বয়সী ইউনিস আব্বাস নামের ওই ব্যক্তি আদালতে নিজের ভূমিকার জন্য দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন। খবর সূত্রে জানা গেছে, আব্বাস জানিয়েছেন, তিনি আন্তরিকভাবেই এই ঘটনার জন্য দুঃখিত।
প্যারিসের একটি আদালতে এই মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে ১০ জন অভিযুক্তের বিচার হবে। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ডাকাতি ও অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
কিম কার্দাশিয়ান নিজেও এই বিচারের সময় আদালতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের ওই ঘটনার সময় কিম প্যারিসে ফ্যাশন উইকে অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
ডাকাতরা একটি অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে কোটি ডলার মূল্যের গহনা লুঠ করে নিয়ে যায়। কিম সে সময় জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন।
আব্বাস জানিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনার সময় ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে নজরদারির কাজ করছিলেন এবং পালানোর পথটি নিরাপদ রাখতে সাহায্য করেছিলেন। যদিও তার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং তিনি সরাসরি কিমকে কোনো হুমকিও দেননি, তবে তিনি এই অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২১ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি ‘আই সেকুয়েস্টারড কিম কার্দাশিয়ান’ নামে একটি ফরাসি ভাষায় বই লেখেন, যেখানে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে কিম কার্দাশিয়ান জানিয়েছিলেন, কিভাবে দুই ব্যক্তি তার ঘরে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং তার আঙুলে থাকা আংটিটি কেড়ে নেয়। ডাকাতরা তাদের অন্যান্য গহনার খোঁজে ছিল।
আব্বাস জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি কিম কার্দাশিয়ানের পরিচয় জানতেন না। তিনি শুধু শুনেছিলেন, একজন “সেলিব্রেটির স্ত্রী” -এর কথা।
পরের দিন টিভিতে খবর দেখে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি আসলে কে ছিলেন। বিচারের সময় তিনি তার ভূমিকার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন।
তবে, তিনি তার অন্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করতে রাজি নন। আব্বাস বলেন, “আমি শুধু বাইরের একজন ছিলাম। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আমি নই। তবে, আমি আমার দায় স্বীকার করছি।”
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আব্বাসের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছিল প্লাস্টিকের সেই বাঁধনে, যা দিয়ে কিমের হাতের বাঁধন তৈরি করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর কিমের মানসিক আঘাতের বিষয়ে আব্বাস বলেন, “আমি বিষয়টি সেভাবে বিবেচনা করিনি। আমি নিজে তাকে কোনো আঘাত করিনি… তাই নিজেকে দায়ী মনে করিনি, কিন্তু ঘটনাটির জন্য আমি দায়ী।”
জানা যায়, ওই ঘটনার পর আব্বাসের সঙ্গীরা কিমের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নেমে এসে একটি ব্যাগ তার হাতে দেয়, যেখানে গহনা ছিল। সাইকেলে করে পালানোর সময় তিনি একটি পুলিশের গাড়ি দেখতে পান।
কিন্তু পুলিশ তখনও ঘটনার বিষয়ে অবগত ছিল না। আব্বাস জানান, সাইকেলের চাকার সঙ্গে ব্যাগটি আটকে গেলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান এবং গহনাগুলো ছড়িয়ে যায়।
পরে তিনি সেখান থেকে কিছু গহনা নিয়ে পালিয়ে যান।
পরের দিন সকালে, এক পথচারী রাস্তার পাশে পাওয়া একটি হীরার ক্রুশ পুলিশের কাছে জমা দেন। সেটিই ছিল চুরি যাওয়া গহনার মধ্যে উদ্ধার হওয়া একমাত্র জিনিস।
ফরাসি বিচার বিভাগের ধারণা, চুরি যাওয়া গহনার মোট মূল্য প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকার সমান)।
আব্বাসের বইয়ের সহ-লেখক থিয়েরি নিয়েমেন জানিয়েছেন, আব্বাস তার কাছে এসেছিলেন, কারণ তিনি ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো সঠিক ছিল না।
মামলার রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত আব্বাসের বই থেকে পাওয়া অর্থ জব্দ করা হয়েছে। কিম কার্দাশিয়ানের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল এই বিচার প্রক্রিয়াটি ফরাসি আইনের অধীনে যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে চান এবং মামলার সঙ্গে জড়িত সকলের প্রতি সম্মান জানাতে চান।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস