ভাগ্য আর অদেখা সুতো: সম্পর্কের এক নতুন ধারণা, যা এখন সবার মুখে মুখে
ছোটবেলা থেকে আমরা গল্প শুনেছি, “যারে দেখতে নারী, তার কি চলে আঁখি”। অর্থাৎ, যাঁর সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার কথা, তিনি অবশ্যই আসবেন, কোনো না কোনো ভাবে।
সম্প্রতি, এমনই একটি ধারণা, ‘ইনভিজিবল স্ট্রিং থিওরি’ (Invisible String Theory) বা ‘অদৃশ্য সুতোর তত্ত্ব’ নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকের মতে, এই তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু সম্পর্ক আসলে আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে—ভাগ্য আমাদের এক সুতোয় বেঁধে দেয়।
এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, আমাদের জীবনে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার কথা—সময়, পরিস্থিতি বা ভৌগোলিক দূরত্ব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক জেইমি ব্রনস্টাইন এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সম্পর্কগুলো নিছক পছন্দের বিষয় নয়, বরং ভাগ্যের লিখন।”
২০২৩ সালে, টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ‘ইনভিজিবল স্ট্রিং থিওরি’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। অনেকে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের গল্প এর সঙ্গে যুক্ত করে ভিডিও তৈরি করেছেন। কেউ হয়তো তাঁদের বিবাহিত জীবনের গল্প বলেছেন, যেখানে তাঁরা আগে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু ভাগ্যের টানে কাছাকাছি এসেছেন।
কেউ হয়তো বলেছেন, কীভাবে তাঁরা একই স্কুলে ছিলেন, একই অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, কিন্তু দেখা হয়নি।
আসলে, ‘ইনভিজিবল স্ট্রিং থিওরি’-র ধারণা নতুন নয়। এর শিকড় প্রোথিত রয়েছে প্রাচীন মিথ এবং লোককথায়। বিশেষ করে, চীনা লোককথার ‘রেড থ্রেড অফ ফেইট’-এর সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এই গল্পে, একটি অদৃশ্য লাল সুতো দিয়ে বাঁধা থাকেন তাঁরা, যাঁদের একসঙ্গে পথ চলার কথা।
এই তত্ত্ব কীভাবে কাজ করে? এর উদাহরণও কম নয়। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা হয়তো আগে কখনও পরস্পরের সঙ্গে দেখা করেননি, কিন্তু বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে তাঁদের পথ মিলে যায়।
কেউ হয়তো এমন একজনের সঙ্গে পরিচিত হন, যাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক ছিল। আবার, এমনও দেখা যায়, বিচ্ছেদের পরেও, হয়তো নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে তাঁরা আবার কাছাকাছি আসেন।
এই তত্ত্ব অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। বিশেষ করে, যারা সম্পর্কের বিষয়ে নতুন কিছু জানতে চান, তাঁদের জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাঁদের মধ্যে থাকা উদ্বেগকে কমাতে সাহায্য করে।
অনেকে মনে করেন, এই তত্ত্বের ওপর বিশ্বাস রাখলে, “আমার জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী কি পাবো না” – এই চিন্তা দূর হয় এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁরা তাঁদের পছন্দের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
তবে, এই তত্ত্বের গভীরতা অনেক। এর মাধ্যমে আমরা সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝি, বুঝি ভাগ্যের ভূমিকা। আমাদের সমাজের মানুষের কাছে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন এবং সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি, সেখানে এই ধরনের ধারণা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিতে পারে।
তাহলে, এই অদৃশ্য সুতোর ধারণা কি সত্যি? এর উত্তর হয়তো সবার কাছে এক রকম হবে না।
তবে, একটি বিষয় নিশ্চিত—এই তত্ত্ব আমাদের সম্পর্কের গভীরতা এবং ভাগ্যের ভূমিকা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: পিপল