খেলাধুলার আসর: অলিম্পিক কি আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করে?
খেলাধুলা মানুষের মনে আনন্দের ঢেউ তোলে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অলিম্পিকের মতো বিশাল ক্রীড়া আসরগুলো কি কেবল কয়েক দিনের আনন্দ দেয়, নাকি এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও রয়েছে?
সম্প্রতি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (LSE), হার্ভার্ড এবং জার্মানির গবেষকদের একটি দল ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসের ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছে। তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য, যা আমাদের ভালো থাকার ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
গবেষকরা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লন্ডন, প্যারিস এবং বার্লিনের প্রায় ২৬,০০০ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক, যেমন – শিক্ষা, বৈবাহিক অবস্থা, আয় এবং ব্যায়ামের অভ্যাস সহ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, অলিম্পিক চলাকালীন সময়ে মানুষের মধ্যে ব্যায়ামের প্রবণতা বেড়েছিল। বিশেষ করে যারা আগে ব্যায়াম করতেন না, তাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, গেমস চলাকালীন সময়ে মদ্যপান ও ধূমপানের পরিমাণও কমে গিয়েছিল।
তবে গবেষকদের মতে, এই ইতিবাচক প্রভাবগুলো ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। অলিম্পিক শেষ হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে আগের মতোই অবস্থা ফিরে আসে। এলএসই’র ড. ক্রিশ্চিয়ান ক্রেকেল বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই অলিম্পিকের স্বাস্থ্যকর আচরণের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কথা বলেন, তবে বাস্তব চিত্র তেমন নয়।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অলিম্পিক মানুষের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা উন্নত করে। ২০১২ সালে লন্ডন, প্যারিস এবং বার্লিনের মানুষের মধ্যে এই ধারণা বেড়েছিল।
লন্ডনে, এই সময়কালে মানুষের জীবনযাত্রার মানের সূচক (Likert scale)-এ ১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে এই ইতিবাচক প্রভাবও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
তাহলে, এত বড় একটা আয়োজনের ফল কি শূন্য? গবেষকদের মতে, একেবারে তা নয়।
অলিম্পিকের কারণে লন্ডন শহরের কিছু অংশে উন্নয়ন হয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যেমন, পূর্ব লন্ডনে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, অলিম্পিকে পদক জয় করলে যে দেশের মানুষের মনে আনন্দ আসে, তেমনটা গবেষণায় পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলছেন, “আনন্দ মূলত আসে এই বিশাল আয়োজন থেকে, খেলাধুলায় সাফল্যের কারণে নয়।”
বর্তমানে ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের জন্য ভারতের নাম শোনা যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, অলিম্পিক হলে পর্যটন বাড়বে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে এবং খেলাধুলার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জাতি তৈরি করা সম্ভব হবে।
তবে অতীতে বিভিন্ন অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এমন প্রতিশ্রুতি সবসময় পূরণ হয় না। তাই, অলিম্পিকের ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।
খেলাধুলার আনন্দ এবং কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান