শিরোনাম: ডেভিড অ্যাটেনবরোর নতুন তথ্যচিত্র: গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারের ধ্বংসলীলা এবং বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা।
প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। তাঁর নতুন তথ্যচিত্র ‘ওশেন’ (Ocean) -এ সমুদ্রের গভীরে মৎস্য শিকারের নামে চলা ধ্বংসলীলার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্রে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার নামে কেমনভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করা হচ্ছে, তা বিস্তারিতভাবে দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে, এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
তথ্যচিত্রে দেখা যায়, অত্যাধুনিক বিশাল ট্রলার বা মেগা-ট্রলারগুলো সমুদ্রের তলদেশে জাল ফেলে মাছ ধরে। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, তেমনই মাছের প্রজাতি দ্রুত হ্রাস পায়।
ডেভিড অ্যাটেনবরো এই বিষয়টিকে নতুন ধরনের উপনিবেশবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ, এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং সেখানকার মৎস্যজীবীরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে জুন মাসে বিশ্ব সমুদ্র দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষ্যে সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাওয়া ‘ওশেন’ তথ্যচিত্রে সমুদ্র রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ৩ শতাংশ সমুদ্র এলাকা সংরক্ষিত। জাতিসংঘের লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর অন্তত ৩০ শতাংশ সমুদ্রকে রক্ষা করা।
তথ্যচিত্রে অ্যাটেনবরো সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের এক অসাধারণ চিত্র তুলে ধরেছেন। যেখানে নানা রঙের মাছ, প্রবাল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের বসবাস। তিনি দেখিয়েছেন, অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে কীভাবে এই সুন্দর স্থানগুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
তবে, তিনি এও বলেছেন, ‘নো-টেক জোন’ তৈরি করার মাধ্যমে অর্থাৎ, যেখানে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেই ধরনের সংরক্ষিত এলাকা তৈরি করে সমুদ্র এবং এর জীববৈচিত্র্যকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত মাছ ধরা বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মাছের প্রজাতিদের পুনরায় তাদের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে অন্যান্য এলাকার মাছের প্রজাতিও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমুদ্র ও মাছের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
তাই, ডেভিড অ্যাটেনবরোর এই তথ্যচিত্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি আমাদের সমুদ্র রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করবে এবং টেকসই মৎস্য আহরণের গুরুত্ব তুলে ধরবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান