কানাডার কুইবেকের একটি হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থায় মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায়, জীবনাবসানের জন্য চিকিৎসকের সাহায্য (Medical Aid in Dying – MAID) বেছে নিয়েছিলেন নর্ম্যান্ড মেনিয়ার নামের একজন পঙ্গু ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমেছে কানাডার কর্তৃপক্ষ।
২০২২ সালে মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়ার পর থেকে মেনিয়ারের হাত ও পায়ের স্বাভাবিক নাড়াচড়ার ক্ষমতা ছিল না। তিনি পেশায় ট্রাক চালক ছিলেন।
জানা যায়, ৬৬ বছর বয়সী মেনিয়ারকে শ্বাসকষ্টের কারণে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সেন্ট-জেরোমি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর স্ত্রী সিলভি ব্রুসোর বরাত দিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তির সময় মেনিয়ারের জন্য বিশেষ ধরনের গদি (mattress) চেয়েছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এই গদিটি পঙ্গু রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়, যা তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ কমাতে সহায়তা করে।
কিন্তু ব্রুসোর অভিযোগ, জরুরি বিভাগে মেনিয়ারকে টানা চার দিন একটি স্ট্রেচারে শুয়ে থাকতে হয়। এর ফলে তাঁর শরীরে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা এতটাই গুরুতর ছিল যে তাঁর মাংস ও হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল।
চিকিৎসকেরা জানান, ক্ষত সারতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। ব্রুসোর ভাষায়, পরিস্থিতি ছিল ‘ভয়াবহ’।
তাঁর কথায়, “আমরা যখনই বিশেষ গদির জন্য বলতাম, সেটি আসত না। এটা যেন একটা যুদ্ধ ছিল।”
কানাডার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সিআইএসএস দেস লরেন্টিডস জানিয়েছে, তারা মেনিয়ারের মৃত্যুর ঘটনাটিকে ‘খুব গুরুত্বের সঙ্গে’ দেখছে এবং ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে।
গুরুতর এই ক্ষত সারানোর জন্য মেনিয়ারকে দু’বার অস্ত্রোপচার করতে হয়। ব্রুসোর ভাষ্যমতে, দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাদায়ক আরোগ্যের পথ এড়িয়ে তাঁর স্বামী হাসপাতালে আর ফিরতে চাননি।
তাই তিনি চিকিৎসকের সাহায্যে জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে কানাডার আইনে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য জীবনাবসানের এই সুযোগ রয়েছে।
মেনিয়ারের মৃত্যুর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান। তাঁর ভাষায়, “আমি আর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।”
মেনিয়ারের মৃত্যুর পর, ২৯শে মার্চ, কানাডার কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে একটি জন-আদালত (public inquiry) গঠন করে।
জন-আদালতের প্রধান ডেভ কিম্পটন জানিয়েছেন, এই তদন্তে চিকিৎসক, নার্স এবং বিভিন্ন অধিকারকর্মীদের বক্তব্য শোনা হবে।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ করাই এই তদন্তের মূল উদ্দেশ্য। মেনিয়ারের ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার পরিচালক স্টিভেন ল্যাপেরিয়ের বলেন, “আমরা কিভাবে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে পারি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
মেনিয়ারের ঘটনা সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে, হয়তো তিনি আজও বেঁচে থাকতেন।”
সেন্ট-জেরোমি হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও এই শুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৬ই জুনে এই জন-আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: পিপল