(মাদারীপুর থেকে,গোলাম আজম ইরাদ)
১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তুমুল যুদ্ধের পর মাদারীপুর জেলা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়।
দু’দিন এক রাতের সম্মুখযুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। হাজারো মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায় নেমে “জয় বাংলা” স্লোগানে উদ্দীপ্ত হয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মাদারীপুরের সব থানা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা শহরের এ আর হাওলাদার জুট মিল এবং নাজিমউদ্দিন কলেজে আশ্রয় নেয়। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘিরে ফেলে।
ঘটনার বিবরণ
৮ ডিসেম্বর, তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের গাড়িচালক আলাউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খবর পৌঁছান যে ৯ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাবে।
সেই খবর পাওয়ার পর তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পাশের এলাকায় অবস্থান নেন। ৯ ডিসেম্বর ভোরে কনভয়সহ পাকিস্তানি সেনারা রওনা দেয়।
ঘটকচর ব্রিজ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে এবং ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেন।
৯ ডিসেম্বর সারারাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সমাদ্দার ব্রিজে যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান।
প্রথমে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণের ভান করে আবার গুলি চালায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে হানাদার মেজর আবদুল হামিদ খটক ৩৭ পাকিস্তানি সেনা ও ১৪ দোসরসহ ৫৩ জন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
বীরত্বের গল্প ও শহীদদের স্মরণ
এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। এই সম্মুখযুদ্ধে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
আত্মসমর্পণের পর পাক সেনাদের অস্ত্র কভার করে রাতভর সমাদ্দার ব্রিজে অবরোধ করে রাখা হয়। ১১ ডিসেম্বর সকালে তাদের কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নেওয়া হয় এবং ১২ ডিসেম্বর মাদারীপুর সাব-জেলে বন্দি রাখা হয়।
আজকের দিনটি মাদারীপুরবাসীর জন্য গৌরবময় এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।