শ্বাস-প্রশ্বাস: মনের শান্তির চাবিকাঠি, সুস্থ জীবনের দিশা
জীবনে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা যেন নিত্যসঙ্গী। পরীক্ষার চাপ, অফিসের কাজের চিন্তা, কিংবা পারিবারিক সমস্যা—এসবের মাঝে হাঁপিয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জানেন কি, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস এই মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সচেতনভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি পেতে পারেন মানসিক শান্তি, ভালো ঘুম, এবং আরও অনেক উপকারিতা।
যুক্তরাজ্যের ব্রাইটন ও সাসেক্স মেডিকেল স্কুলের শ্বাস-প্রশ্বাস বিষয়ক গবেষণাগারের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ গাই ফিঞ্চাম বলেন, “শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুবই সহজ, কিন্তু এর কার্যকারিতা অনেক গভীর। মানসিক চাপ কমানো এবং শারীরিক ও মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এর জুড়ি নেই।”
আসুন, জেনে নেওয়া যাক শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু কৌশল এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে:
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চা আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে আমাদের শরীরে অবস্থিত ভেগাস নার্ভ সক্রিয় হয়।
এই নার্ভ মস্তিষ্কের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর সংযোগ স্থাপন করে। এর ফলে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে, রক্তচাপ কমে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরনে পরিবর্তন এনে শরীরের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক ক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনা যায়। ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার ফলে ফুসফুস এবং রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ সামান্য বাড়ে।
এটি শরীরের জন্য ভালো, কারণ কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে এবং মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডে আরও বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের শরীরের “Rest and Digest” প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন মেমোরিয়াল হাসপাতালের পালমোনারি ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. রাজ দাশগুপ্তের মতে, “শ্বাস-প্রশ্বাস যত ধীর ও গভীর হবে, এই প্রক্রিয়া তত বেশি সক্রিয় হবে।”
শ্বাস-প্রশ্বাস মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। সম্প্রতি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মস্তিষ্কের এমন কিছু নিউরনের সন্ধান পেয়েছেন, যা শ্বাস-প্রশ্বাস কেন্দ্র এবং মস্তিষ্কের উদ্দীপনা ব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়ামের আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে, যেমন—
কার্যকর শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশল
বিভিন্ন ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশল রয়েছে, যা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন:
শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম শুরু করার আগে, শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ বেছে নিন। কোনো অসুবিধা হলে বা মাথা ঘোরালে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করুন।
ফিঞ্চামের মতে, “শ্বাস-প্রশ্বাস কখনই জোর করে নেওয়া উচিত নয়। এর লক্ষ্য হল মানসিক চাপ কমানো, বাড়ানো নয়।”
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চা আপনার জীবনকে আরও সুন্দর ও সুস্থ করে তুলতে পারে। তাই, আজ থেকেই চেষ্টা করুন এই কৌশলগুলো!
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক