মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক সম্রাট “এল চাপো” খ্যাত জোয়াকিন গুজম্যানের পরিবারের কয়েকজন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন। মেক্সিকোর নিরাপত্তা সচিব ওমার গার্সিয়া হারফুচ মঙ্গলবার দেশটির রেডিও ফর্মুলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান।
তাঁর মতে এল চাপোর ছেলে ওভিদিও গুজম্যান লোপেজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান একটি মামলার সমঝোতার অংশ হিসেবেই সম্ভবত এই ঘটনা ঘটেছে।
ওভিদিও গুজম্যান লোপেজ, যিনি সিনালোয়া কার্টেলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের মুখোমুখি। তাঁর বাবা এল চাপো এই কার্টেল প্রতিষ্ঠা করেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ওভিদিওকে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়। এর কয়েক মাস আগে, মেক্সিকান কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে, যেখানে অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ওভিদিও প্রথমে মাদক পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সম্প্রতি, তিনি তাঁর বক্তব্য পরিবর্তনের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন।
সিএনএন-এর পর্যালোচনা করা একটি আদালতের নথি অনুসারে, চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
মেক্সিকোর নিরাপত্তা সচিব হারফুচ রেডিও ফর্মুলাকে আরও জানান, “ওভিদিও-র পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিষয়টি বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার সুযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
মেক্সিকোর বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওভিদিও’র পরিবারের ১৭ জন সদস্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য সিএনএন মেক্সিকোর নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
হারফুচ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মেক্সিকান কর্তৃপক্ষের কোনো অভিযোগ নেই।
ওভিদিও, এল চাপোর চার ছেলের মধ্যে একজন, যাদের বিরুদ্ধে সিনালোয়া কার্টেলের হয়ে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার ভাই “লস চাপিতোস” নামে পরিচিত।
অনুসন্ধানী সংস্থা ইনসাইট ক্রাইমের মতে, এই ভাইদের কিশোর বয়সে কার্টেলে আনা হয়েছিল এবং তারা ধীরে ধীরে সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।
এল চাপোর গ্রেফতার ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের পর, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাদের প্রভাব বাড়তে শুরু করে।
এল চাপোর আরেক ছেলে, জোয়াকিন গুজম্যান লোপেজও বর্তমানে মার্কিন হেফাজতে রয়েছেন।
তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মেক্সিকো থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময় গ্রেপ্তার হন।
ধারণা করা হয়, তিনি সিনালোয়া কার্টেলের আরেক শীর্ষ নেতা ইসমাইল “এল মায়ো” জাম্বাদাকে একটি জমির প্রস্তাবের মাধ্যমে সেখানে ডেকে এনেছিলেন।
মেক্সিকোর নিরাপত্তা সচিব রোসা ইসেলা রড্রিগেজ গত আগস্টে জানান, জোয়াকিন তাঁর ভাই ওভিদিও’র সঙ্গে একটি চুক্তিতে এসেছিলেন, যার মাধ্যমে তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
যদিও ওভিদিও’র আইনজীবী এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এল মায়োর আইনজীবীও জানান, তাঁর মক্কেল আত্মসমর্পণ করেননি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমঝোতাও করেননি।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে অপহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এল চাপোর আরও দুই ছেলে, ইভান আরচিভালদো এবং জেসুস আলফ্রেডো গুজম্যান সালাজার এখনো পলাতক।
তাঁদের ধরিয়ে দিতে পারলে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে এক কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১০ কোটি টাকার বেশি) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৯ সালেও মেক্সিকান বাহিনী ওভিদিওকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে, কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়।
গ্রেপ্তারের পরপরই কার্টেলের সদস্যরা ওভিদিওকে মুক্ত করতে মেক্সিকান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
পরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের নির্দেশে ওভিদিওকে মুক্তি দেওয়া হয়, যাতে সহিংসতা বন্ধ করা যায়।
এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং ২০২৩ সালে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত পলাতক ছিলেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন