নেদারল্যান্ডসে উন্মোচিত হলো অভিবাসন বিষয়ক নতুন জাদুঘর ‘ফেনিক্স রটারডাম’। এটি কেবল একটি জাদুঘর নয়, বরং বিশ্বজুড়ে মানুষের স্থানান্তরের এক বিশাল আলেখ্য।
যেখানে অভিবাসনের বেদনা, সংগ্রাম, সাফল্যের গল্পগুলো শিল্প আর ইতিহাসের মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে।
ইউরোপের এই আধুনিক শহরে, যেখানে বহু জাতির মানুষের বসবাস, সেখানে এই জাদুঘরটি যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
রটারডামের পুরনো একটি গুদামঘরে, যা একসময় বিশ্বের বৃহত্তম গুদামগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল, সেখানেই গড়ে উঠেছে এই জাদুঘরটি।
এর ভেতরের কাঠামো দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে।
এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে – ‘টরনেডো’ নামের একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম, যা শহরের ৩৬০-ডিগ্রি দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেয়।
এছাড়া, শিল্পী মা ইয়াংসং-এর ডিজাইন করা এই প্ল্যাটফর্মটি যেন দর্শকদের এক নতুন গন্তব্যের দিকে যাত্রা করার অনুভূতি দেয়।
জাদুঘরের পরিচালক আ্যনে ক্রমার্স বলেন, “অভিবাসন একটি চিরন্তন এবং সার্বজনীন বিষয়।
মানুষ হিসেবে আমরা সবসময়ই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছি।
এটি আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তিনি আরও যোগ করেন, “এই জাদুঘর কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয়, তবে এটি জরুরি।
ফেনিক্স রটারডামে কেবল অভিবাসনের কষ্টের কথাই বলা হয়নি, বরং ভালোবাসা, কাজ এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মানুষ যে স্থান ত্যাগ করে, সেই গল্পগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
এখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, শিল্পকর্ম, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অভিবাসনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ শিল্পী ইয়াঙ্কা শোন increase করেন ‘রেফিউজি অ্যাস্ট্রোনট IX’, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর একজন নভোচারীর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়াও, শিল্পী রেড গ্রুমসের তৈরি করা একটি বিশাল আকারের নিউইয়র্ক সিটি বাসের মডেল রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষেরা তাদের নতুন শহরে জীবন গড়ার গল্প বলছে।
জাদুঘরের একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘স্যুটকেস ল্যাবিরিন্থ’।
এখানে দুই হাজারেরও বেশি স্যুটকেস সংগ্রহ করা হয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন মানুষের অভিবাসনের গল্প সংরক্ষিত আছে।
প্রতিটি স্যুটকেসের সাথে একটি করে কিউআর কোড রয়েছে, যা স্ক্যান করে সেই ব্যক্তির মাইগ্রেশন জার্নি সম্পর্কে শোনা যায়।
এই জাদুঘরটি তৈরি হয়েছে ‘ড্রিম এন ড্যাড’ নামক একটি পরিবারের অর্থায়নে।
তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো রটারডাম শহরকে ইউরোপের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া।
ফেনিক্স রটারডাম জাদুঘরটি শুধু একটি স্থান নয়, এটি মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এখানে অভিবাসনকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।
যারা তাদের জন্মভূমি থেকে দূরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন, তাদের সংগ্রামের গল্পগুলো এখানে শিল্প আর ইতিহাসের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian