আফ্রিকার চলচ্চিত্র জগত ধীরে ধীরে বিশ্ব দরবারে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছে, যেখানে তাদের সিনেমা নির্মাণের নিজস্ব শৈলী আর গল্প বলার ধরন দর্শককে আকৃষ্ট করছে। সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পাওয়া ‘মাই ফাদার’স শ্যাডো’ তেমনই একটি সিনেমা, যা আফ্রিকার বাইরের দর্শকদেরও মন জয় করেছে।
আকিনোলা ডেভিস জুনিয়র পরিচালিত এই ছবিতে ১৯৯৩ সালের নাইজেরিয়ার অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পিতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা দুই কিশোর ছেলের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে দেশটির টালমাটাল পরিস্থিতি, ক্ষমতার পালাবদল—সবকিছুই গল্পের পটভূমি তৈরি করেছে।
সিনেমার গল্পে দেখা যায়, ফোলা নামের এক ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের থেকে দূরে ছিলেন, হঠাৎ করেই তাদের গ্রামে ফিরে আসেন। সন্তানদের কাছে বাবার এই অপ্রত্যাশিত আগমন একদিকে যেমন কৌতূহলের জন্ম দেয়, তেমনি তাদের মনে বাবার প্রতি ভালোবাসা ও উপলব্ধির জন্ম হয়। ফোলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোপে দিরিসু।
একদিন ফোলা তার দুই ছেলেকে নিয়ে লাগোসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। উদ্দেশ্য, বকেয়া বেতন আদায় করা। এই যাত্রাপথে, বাবার জীবনের অন্য দিকগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে ছেলেদের কাছে। তারা জানতে পারে মায়ের এক সময়ের থিয়েটার প্রেম, সমাজের ধনী শ্রেণীর জীবনযাত্রা, এমনকি বাবার দুর্বলতাগুলোও।
সিনেমায় একদিকে যেমন পিতৃত্বের গভীরতা, পারিবারিক বন্ধন, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই সেই সময়ের নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং মানুষের জীবনযাত্রার ছবিও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে। ছবির দুই কিশোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন গডউইন চিমেরি ইগবো এবং চিবিউকে মার্ভেলাস ইগবো। তাদের অভিনয় স্বাভাবিক এবং হৃদয়স্পর্শী।
পরিচালক ডেভিস জুনিয়র ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা এবং বেঁচে থাকার লড়াইকে তুলে ধরেছেন। ছবিতে পিতার অনুপস্থিতি এবং এর প্রভাব গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। সিনেমাটি ভালোবাসার সংজ্ঞা, সম্পর্কের জটিলতা এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
‘মাই ফাদার’স শ্যাডো’ একটি মর্মস্পর্শী চলচ্চিত্র, যা দর্শকদের সম্পর্কের গভীরতা অনুভব করতে এবং একটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও সময়ের গল্পে নিজেদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান