মায়া সভ্যতার অজানা জগৎ: মেক্সিকোর তিনটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়।
মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপ, যা একসময় মায়া সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র ছিল, আজও তার লুকানো ইতিহাসে পরিপূর্ণ। এখানকার জঙ্গল আর পাথুরে স্থাপত্যের মাঝে লুকিয়ে আছে মায়া সংস্কৃতির অনেক অজানা গল্প।
চিচেন ইৎজার মতো জনপ্রিয় স্থানগুলির বাইরেও, এখানে এমন তিনটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে, যা ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এই স্থানগুলো শুধু মেক্সিকোর নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ।
প্রথমেই আসা যাক পালাঙ্কে (Palenque)-র কথায়।
এটি মেক্সিকোর চিয়াপাস রাজ্যে অবস্থিত, ঘন সবুজ অরণ্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক মায়া নগরী। পালাঙ্কের প্রধান আকর্ষণ হলো এখানকার বহু-স্তর বিশিষ্ট পিরামিড, যা দেখলে প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক দারুণ নিদর্শন চোখে পড়ে।
এখানকার পাথরের গায়ে খোদাই করা চিত্রলিপিগুলো (hieroglyphic inscriptions) মায়া সভ্যতার সমাজ, সংস্কৃতি এবং তাদের শাসকদের সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। পালাঙ্কের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা হলো ‘টেম্পল অফ দ্য ইনস্ক্রিপশনস’ (Temple of the Inscriptions)।
এখানে পাওয়া গেছে কুইনিক জ্যানাব পাকাল নামের এক শাসকের সমাধিস্থল, যেখানে তাঁর মূল্যবান জেড মাস্ক (jade mask) আজও প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এক বিস্ময়। মেক্সিকো সিটির ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ অ্যানথ্রোপলজিতে (National Museum of Anthropology) এই মাস্কটি সংরক্ষিত আছে।
এরপর আমরা যাবো কাম্পেচে রাজ্যের কালকমুলে (Calakmul)।
কালকমুল-এর অর্থ হলো ‘সংলগ্ন পিরামিডের শহর’। এটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে হাজারো প্রাচীন স্থাপত্য বিদ্যমান। কালকমুল একসময় কানুল (Kaanul) বা ‘সাপের রাজবংশ’-এর রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল।
এখানকার সাদা পাথরের রাস্তাগুলো (sacbés) একসময় সামরিক, কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো। কালকমুল-এর গভীর জঙ্গলে ভ্রমণের সময় বানর, ময়ূর এবং টু কানের মতো বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়, যা এই স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
সবশেষে, ইউকাটান উপদ্বীপের উক্সমাল-এর (Uxmal) কথা বলতে হয়। কানকুন থেকে প্রায় চার ঘণ্টা দূরে অবস্থিত উক্সমাল, মায়া সভ্যতার শেষ দিকের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।
এখানকার স্থাপত্যশৈলী ‘পুক’ নামে পরিচিত, যা চিচেন ইৎজার স্থাপত্য থেকে কিছুটা আলাদা। উক্সমালের প্রধান আকর্ষণ হলো ‘প্যারামিড অফ দ্য ম্যাজিশিয়ান’ (Pyramid of the Magician)।
এখানে মায়া সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক, যেমন – বলিদান প্রথা, মেসোআমেরিকান বল গেম এবং বিভিন্ন কিংবদন্তীর সম্পর্কে জানা যায়। উক্সমালের ‘হাউস অফ দ্য পিজিওনস’ (House of the Pigeons) নামের ২৪০ ফুট লম্বা একটি কাঠামোও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মায়া সভ্যতার এই স্থানগুলো শুধু মেক্সিকোর নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী, যা আমাদের অতীত সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
তাই, চিচেন ইৎজার ভিড় এড়িয়ে, যারা একটু শান্ত এবং ভিন্ন কিছু খোঁজেন, তাদের জন্য পালাঙ্কে, কালকমুল এবং উক্সমাল-এর মতো স্থানগুলো হতে পারে এক অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক