**বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা: সতর্ক করলেন জেপি মরগ্যান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী**
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক জেপি মরগ্যান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমি ডিমন বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বাজারে এখন পর্যন্ত শুল্কের প্রভাব এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ‘অসাধারণ রকমের আত্মতুষ্টি’ দেখা যাচ্ছে।
তাঁর মতে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দা (stagflation)-এর সম্ভাবনা অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের ধারণার চেয়ে বেশি।
সোমবার (মে ২০, ২০২৪) কোম্পানির বার্ষিক বিনিয়োগকারী দিবসে দেওয়া ভাষণে ডিমন বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান শুল্কের কারণে বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা উদ্বেগের কারণ।
ডিমন উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাঁর মতে, মন্দা দেখা দিলে, এর ফলস্বরূপ ঋণখেলাপির সংখ্যাও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছে। সংস্থাটি দেশটির ক্রমবর্ধমান ঋণের পরিমাণ এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মুডি’স-এর এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ নেওয়ার খরচ আরও বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বাজারের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। শেয়ার বাজারে সামান্য উত্থান দেখা গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমে যায়।
বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন, ফলে এর দাম বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি ও আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এলে, চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে এমন অনেক বাংলাদেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ তাদের কাঁচামালের দাম বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারের এই পরিবর্তনগুলো দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
তাই, দেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। একইসঙ্গে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে হলে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন