এলার্জি, সর্দি-কাশি বা ঘুমের সমস্যা—আমাদের দেশে এসবের জন্য হরহামেশাই ওষুধের দোকান থেকে কিনে ঔষধ খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এমনটা করেন অনেকে।
তবে এমনটা করা কতটা নিরাপদ? সম্প্রতি, চিকিৎসকরা একটি অতি পরিচিত ওষুধের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যা আমরা প্রায়ই কিনে থাকি—ডাইফেনহাইড্রামিন (Diphenhydramine)।
এই ওষুধটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারের ফলে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া (dementia)-এর ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডাইফেনহাইড্রামিন আসলে কী? এটি একটি অ্যান্টিহিস্টামিন (antihistamine), যা অ্যালার্জির উপসর্গ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও, এটি ঘুমের সমস্যা, সাধারণ সর্দি-কাশি, এমনকি মোশন সিকনেস বা ভ্রমণকালীন অসুস্থতা কমাতেও কাজে লাগে।
বাজারে এটি বিভিন্ন নামে পাওয়া যায় এবং খুব সহজেই পাওয়া যায় বলে অনেকেই এর বিপদ সম্পর্কে অবগত নন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাইফেনহাইড্রামিন-এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষ করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ সেবন করছেন, তাদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, এমনকি ডিমেনশিয়ার মতো স্নায়ু-সংক্রান্ত রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত ডাইফেনহাইড্রামিন গ্রহণ করেন, তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টানা তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে এই ওষুধটি গ্রহণ করেছেন, তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
তাহলে আমাদের করণীয় কী?
চিকিৎসকরা বলছেন, ডাইফেনহাইড্রামিন-এর পরিবর্তে দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন—লোরাটাডিন (loratadine), সেটিরিজিন (cetirizine) অথবা ফেক্সোফেনাডিন (fexofenadine)।
এগুলো মস্তিষ্কে কম প্রভাব ফেলে, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, কোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিশেষ করে, যাদের দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
এছাড়া, ওষুধের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
অতিরিক্ত মাত্রায় ডাইফেনহাইড্রামিন সেবন করলে খিঁচুনি, হৃদরোগ এবং কোমার মতো গুরুতর সমস্যাও হতে পারে।
সুতরাং, সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে প্রায়ই আমরা যে সব ওষুধ ব্যবহার করি, তার ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।
তাই, কোনো ওষুধ সেবনের আগে ভালোভাবে জানা দরকার এর উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক