ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া বিলাসবহুল একটি ইয়ট থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। ইতালির উপকূলের কাছে, সিসিলির পোর্টিচেলোতে গত বছর আগস্টে ভয়াবহ ঝড়ে ডুবে গিয়েছিল ‘বেয়েশিয়ান’ নামের এই ইয়টটি।
এতে নিহত হয়েছিলেন সাতজন, যাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ টেক বিলিওনেয়ার মাইকেল লিন্চ এবং তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ে হান্না।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারীরা ইয়টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বোম (boom) বা মাস্তুলের সাথে যুক্ত লম্বা দণ্ডটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ছিল জলের নিচে থাকা ধ্বংসাবশেষ থেকে তোলা প্রথম অংশ।
জানা গেছে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই ইয়টটি সাগরের তলদেশে প্রায় ৫০ মিটার গভীরে ছিল।
তবে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়েও ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। গত ৯ই মে, ইয়টের বোমটি আলাদা করতে গিয়ে ডাচ ডুবুরি রবকোরনেলিস মারিয়া হুইবেন উয়িবেন এক বিস্ফোরণে নিহত হন।
ইতালীয় কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডুবুরির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে এই বোম উদ্ধারের বিষয়টি তদন্তের অংশ হবে।
ব্রিটিশ তদন্তকারীরা দুর্ঘটনার কয়েক দিন পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাদের মতে, ইয়টটি কাঠামোগত ত্রুটির কারণে ডুবে গিয়েছিল।
তবে, ইতালীয় তদন্তকারীরা এই মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। তাদের মতে, ইয়টের কাঠামো পরীক্ষা না করে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়।
বর্তমানে ইয়টটি সাগরের তলদেশে কাত হয়ে পড়ে আছে, যে কারণে এর ভেতরের অংশের ছবি তোলাও সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, ইয়টে প্রায় ১৮,০০০ লিটার জ্বালানি ছিল। ঝড়ের সময় ইয়টের নাবিকরা হ্যাচগুলো বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন কিনা, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
ব্রিটিশ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ক্রু সদস্য দূর থেকে ঝড়ের একটি ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় যে তারা খারাপ আবহাওয়ার বিষয়ে অবগত ছিলেন।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তবে ক্যাপ্টেন জেমস কাটফিল্ড এবং আরও দুই ক্রু সদস্যের বিরুদ্ধে যাত্রীদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইয়টের ভেতরে সুরক্ষিত ভল্টে লিন্চের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু এনক্রিপ্টেড হার্ড ড্রাইভ ছিল।
তবে, জাহাজটি জল থেকে তোলার আগে সেগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
আগে পরিকল্পনা ছিল, ইয়টের কাঠামো তোলার পরেই মাস্তুল ও বোম উদ্ধার করা হবে। কিন্তু ডুবুরির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য বোমটি দ্রুত তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২৬ থেকে ২৮ মের মধ্যে ইয়টের মূল কাঠামো জল থেকে তোলার কথা রয়েছে। এরপর এটিকে টার্মিনি ইমেরেসের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে কর্মকর্তারা এর বিস্তারিত পরীক্ষা করবেন।
গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন