গাজায় মানবিক বিপর্যয়: খাদ্যাভাবে শিশুদের মৃত্যু, পরিবারের জন্য সংগ্রাম করছে কিশোরী।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে সেখানকার মানুষজন, বিশেষ করে শিশুরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরী, জানা মোহাম্মেদ খলিল মুসলেহ আল-স্কেইফি, তার পরিবারের সদস্যদের বাঁচানোর জন্য দিনরাত সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
জানা’র পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক বছর আগে ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে তার বড় ভাই নিহত হওয়ার পর থেকে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাঁধে। তার বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ।
তাই পরিবারের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা এখন তার একার দায়িত্ব। গাজা শহরের একটি জল বিতরণ কেন্দ্র থেকে পানি আনতে গিয়ে জানা জানায়, “আমি চাই না আমার বাবার কষ্ট হোক।
তাই আমি শক্তিশালী থাকতে চাই। বাবা যেন কষ্ট না পায়, সেজন্যই আমি সব করি।” জানা আরও জানায়, বয়স্ক বাবা অসুস্থ থাকার কারণে তার পক্ষে ভারী বালতি বহন করা সম্ভব নয়।
জানা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে একটি বালতি পানি সংগ্রহ করে। এরপর সেই পানি নিয়ে বাড়ি ফেরে। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও পানির সংকট তীব্র হওয়ায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা জানায়, অনেক সময় তাদের নোনা পানি ব্যবহার করতে হয়েছে।
গাজায় খাদ্য সংকট এতটাই তীব্র যে, অনেক পরিবার তাদের খাবার দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ময়দার বদলে ভাঙা পাস্তা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। জানা জানায়, গত কয়েক দিনে সে এক কেজি ওজনের পাস্তা কিনেছিল, যার দাম ছিল ১৫ মার্কিন ডলার।
যা দিয়ে কোনোমতে তাদের কয়েক দিন চলতে হয়েছে।
জানা’র পরিবারের দুঃখের শেষ নেই। জানা’র এক মাসতুতো বোন, জানাত, অপুষ্টির কারণে মারা গেছে। জানা’র মা আয়া জানান, জন্মের সময় জানাতের ওজন ছিল খুবই কম।
ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠছিল। কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের কারণে প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শিশুটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অপুষ্টির শিকার হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পরও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ঔষধের অভাবে তার মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ১১ হাজার गर्भवती নারী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং প্রায় ১৭ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টির জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে অন্তত ৫৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গাজায় বর্তমানে বিদ্যুতের অভাব, স্কুল বন্ধ এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থলেরও সংকট রয়েছে।
সেখানকার একটি পরিবারের সদস্য হিসেবে জানা’র জীবন এক দুঃস্বপ্নের মতো।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েল নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গাজায় মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন