যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) -এর একটি নতুন সিদ্ধান্তের কারণে ওজন কমানো এবং ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে অফ-ব্র্যান্ড ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে, যেগুলোর উপর অনেক রোগী এতদিন ধরে নির্ভরশীল ছিলেন।
মূলত, সেমাগ্লুটাইড (Semaglutide) ও তিরজেপাটাইড (Tirzepatide) জাতীয় ওষুধের অফ-ব্র্যান্ড সংস্করণ তৈরি ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এফডিএ। এই ওষুধগুলো সাধারণত ওজেম্পিক (Ozempic) এবং উইগোভি (Wegovy)-এর মতো ব্র্যান্ড নামে পরিচিত।
জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে এই ওষুধগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গিয়েছিল। সেই কারণে, রোগীদের সুবিধার জন্য কম্পাউন্ডিং ফার্মেসিগুলোকে (compounding pharmacies) একই উপাদান ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এফডিএ-এর মতে, এখন যেহেতু মূল ব্র্যান্ডের ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, তাই কম্পাউন্ডিং ফার্মেসিগুলোর আর এই ধরনের ওষুধ তৈরি করার প্রয়োজন নেই।
ফলে, অফ-ব্র্যান্ড ওষুধগুলো বাজারে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন রোগীরা, বিশেষ করে যারা তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যাওয়া অফ-ব্র্যান্ড ওষুধগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এই ওষুধগুলো অনেক রোগীর জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছিল এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে সাহায্য করেছিল।
উদাহরণস্বরূপ, মিশেল পিয়ার্স নামের টেক্সাসের একজন নারী, যিনি অফ-ব্র্যান্ড সেমাগ্লুটাইড ইনজেকশন ব্যবহার করতেন, জানিয়েছেন যে এই ওষুধটি তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি আশঙ্কা করছেন, এই ওষুধ বন্ধ হয়ে গেলে তার স্বাস্থ্যগত উন্নতিতে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফ-ব্র্যান্ড ওষুধের ব্যবহার নিরাপদ নাও হতে পারে। কারণ, এই ওষুধগুলোর গুণগত মান, উপাদান এবং সঠিক ডোজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। মূল ওষুধের প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো জানিয়েছে যে তারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং দাম কমানোর চেষ্টা করছে, যাতে রোগীরা সহজে ওষুধ পায়।
তবে, অনেক রোগীর আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের জন্য ওষুধ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে, যাদের স্বাস্থ্য বীমা এই ওষুধগুলোর পুরো খরচ বহন করতে রাজি নয়, তাদের জন্য বেশি দামে ব্র্যান্ডেড ওষুধ কেনা বেশ কঠিন হবে।
তাই, এই পরিস্থিতিতে রোগীদের জন্য ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ওষুধের সহজলভ্যতা এবং মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখানেও ওষুধের দাম এবং গুণগত মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। সরকারি নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত, রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
তথ্যসূত্র: সিএনএন