গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে। আল জাজিরার সূত্রে জানা যায়, বুধবার পর্যন্ত চালানো হামলায় গাজা শহরে অন্তত আট জন, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে দুজন এবং মাগাজি শরণার্থী শিবিরে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে মানবিক ত্রাণ সরবরাহের অভাবে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কার মধ্যে এই হামলা চালানো হয়।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের প্রতি মানবিক সহায়তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
জাতিসংঘের মুখপাত্র জেন্স লারকে জানিয়েছেন, কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে কোনো ত্রাণ সরবরাহ হয়নি। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ৯৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে।
তবে, আল জাজিরার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ ট্রাক সীমান্তেই আটকে আছে এবং মাত্র পাঁচটি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
চিকিৎসা সহায়তা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) জরুরি সমন্বয়কারী পাসকাল কোইসার্ড বলেছেন, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজায় ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ খুবই কম রাখছে, যা তাদের অবরোধের আসল উদ্দেশ্যকে আড়াল করার চেষ্টা।”
আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় হামলা জোরদার করার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে।
এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও গাজার ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ বিবেচনায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করার কথা জানিয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার জন্য বিশ্ব নেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করা, ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ করা, আটককৃতদের মুক্তি এবং গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এদিকে, পোপ ফ্রান্সিসও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি আবারও মানবিক সহায়তার প্রবেশ এবং ধ্বংসাত্মক সংঘাত বন্ধের জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছি, যার মূল্য দিচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষ।”
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩,৫৭৩ জনে। এছাড়া, আহত হয়েছে ১,২১,৬৮৮ জন।
হামাস হলো একটি ফিলিস্তিনি ইসলামিক সংগঠন, যা গাজার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে লিপ্ত এবং তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলো ইসরায়েলি নাগরিক ও সামরিক স্থাপনা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা