নারীদের স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক বিশ্বে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো নারীদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছে, তাদের ক্ষমতায়ন করেছে।
এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হলো একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, যা মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সম্প্রতি, একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে বিস্তারিত।
একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আসলে কী? এই পদ্ধতিতে, হরমোন-যুক্ত বড়িগুলো নিয়মিত বিরতিতে না খেয়ে, একটানা সেবন করা হয়।
এর ফলে মাসিক হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই পদ্ধতিটি জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাসিকের সময়কার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, যেমন – পেট ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তস্রাব, মাইগ্রেন, ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা কথা বলেছি একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট, ডা. কবিতা নন্দার সঙ্গে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করছেন।
ডা. নন্দা জানিয়েছেন, “জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মূলত ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।”
এই বড়িগুলোতে সাধারণত সিনথেটিক (কৃত্রিম) হরমোন, যেমন – ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন-এর সমন্বয় থাকে। প্রোজেস্টেরন-যুক্ত অন্য পদ্ধতিগুলো, যেমন – ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট, বা কপার-টি-এর মাধ্যমেও একই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
ডা. নন্দা আরও বলেন, “সাধারণত, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ২১ দিন খাওয়ার পর ৭ দিনের বিরতি দেওয়া হয়। এই সময়ে মাসিক হয়।
কিন্তু একটানা বড়ি সেবনের ক্ষেত্রে, কোনো বিরতি থাকে না। ফলে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তরটি পাতলা থাকে এবং মাসিক বন্ধ থাকে।”
তিনি আরও যোগ করেন, একটানা বড়ি সেবন নিরাপদ এবং এর কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। বরং এটি অনেক নারীর জন্য মাসিক সম্পর্কিত শারীরিক কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে।
তবে, একটানা বড়ি সেবনের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যেমন – বমি বমি ভাব, স্তনে ব্যথা বা হালকা মাথাব্যথা। শুরুতে কারো কারো অনিয়মিত রক্তপাত হতে পারে, তবে সাধারণত সময়ের সাথে সাথে এটি কমে যায়।
ডা. নন্দা আরও উল্লেখ করেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বন্ধ করার পর সাধারণত ১-২ মাসের মধ্যে মহিলাদের স্বাভাবিক ঋতুচক্র ফিরে আসে। একটানা বড়ি সেবন বন্ধ্যাত্বের কারণ হয় না।
ডা. নন্দা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন।
আগে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহজলভ্য ছিল না, তখন নারীরা হয়তো গর্ভবতী থাকতেন অথবা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতেন।
সে কারণে তাদের মাসিকের বিরতি হতো। তাই, মাসিক হওয়াটা সবসময় স্বাভাবিক বিষয় ছিল না।
ডা. নন্দা আরও জানান, যাদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, অথবা এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis) বা মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য একটানা বড়ি সেবন বেশ উপকারী হতে পারে।
এছাড়া, যাদের শরীরে আয়রনের অভাব রয়েছে বা শারীরিক অথবা মানসিক কোনো সমস্যা রয়েছে, তারাও এই পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। তবে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বর্তমানে, সামাজিক মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ভুল তথ্য প্রায়ই দেখা যায়। তাই, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখাটা জরুরি।
সবার মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে, তাই সচেতন থাকুন এবং সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নিন।
তথ্য সূত্র: CNN