নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ায় পেরুর চিকলায়ো শহরে আনন্দের ঢেউ, আলোচনায় ল্যাটিন আমেরিকার ভবিষ্যৎ।
ক্যাথলিক চার্চের নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন রবার্ট প্রিভোস্ট, যিনি পোপ লিও ১৪ নামে পরিচিত হবেন। তাঁর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পেরুর চিকলায়ো শহরে আনন্দের জোয়ার বইছে।
কারণ, নতুন পোপ এক সময় এই শহরের বিশপ ছিলেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
পোপ লিও ১৪, যিনি একসময় চিকলায়োর বিশপ ছিলেন, তাঁর জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তিনি পেরুর নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন।
চিকলায়োর মানুষজন তাঁকে নিজেদের লোক বলেই মনে করেন। সেখানকার স্থানীয়দের মধ্যে তিনি ‘পাপা চিকলায়ানো’ নামে পরিচিত।
তাঁর শহরের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন তিনি নতুন পোপ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে ইতালীয় ভাষার বদলে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন এবং বিশেষভাবে চিকলায়োর মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
চিকলায়োতে পোপের আগমন সেখানকার মানুষের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। দরিদ্র এই শহরে তিনি দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সেখানকার একটি চার্চের ফাদার হোসে অ্যালেজান্দ্রো কাস্টিলো ভেরা জানান, পোপের উদ্যোগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন।
তবে শুধু চিকলায়ো নয়, ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে ক্যাথলিক ধর্মানুসারীর সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে এই অঞ্চলে ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে।
বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়নের অভিযোগও উঠেছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
চিকলায়োর ৭০ বছর বয়সী শিক্ষক ইয়োলান্ডা ডিয়াজ মনে করেন, পোপ লিও ১৪-এর নেতৃত্বে চার্চে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি তিনি আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবেন।”
পোপের দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসন বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে।
২০১৮ সাল থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ভেনেজুয়েলা থেকে আসা মানুষের জন্য পেরু অন্যতম আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
ডিয়াজ জানান, পোপ লিও ১৪ অভিবাসন গ্রহণকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা করেছেন।
পোপ লিও ১৪-এর অতীত নিয়েও কিছু বিতর্ক রয়েছে।
বিশপ থাকাকালীন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও তিনি সবসময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তারপরও বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
সবকিছু বিবেচনা করে, চিকলায়োর মানুষজন আশা করছেন পোপ লিও ১৪-এর নেতৃত্বে ক্যাথলিক চার্চ নতুন পথে এগিয়ে যাবে এবং সেখানকার মানুষের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা